গৃহহীন প্রানীদের সহায়তায় আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশঃ ২০২৩-১২-০৫ - ১৭:২৩

পশু হত্যা বন্ধ করতে হবে
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বিবেকসম্পন্ন মানুষ ভাষাহীন প্রাণীর কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। ভাষাহীন প্রাণীর কল্যাণে কাজ করছে। কিন্তু তার সাথে অন্যদিকে হৃদয়হীন মানুষেরা পশু হত্যাসহ পশুর সাথে অমানবিক আচরন করছে। ২৬শে নভেম্বর বরগুনায় একটি সদ্য জন্ম দেয়া পাঁচটি কুকুর ছানার মা কুকুরকে হত্যা করে কিছু নির্দয় মানুষ। যা অমানবিক ঘটনা। এদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষদের দাড়াতে হবে। অসহায় প্রানী এবং পশুদের সেবাতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিজন নাগরিক কিঞ্চিত পরিমান সময় ব্যয় করে অবহেলিত কুকুর—বিড়ালের জন্য সেবার হাত বাড়ালে আশ্রয় পাবে পথে থাকা কুকুর—বিড়াল। মানুষেরই উচিত এসকল অবহেলিত কুকুর—বিড়ালদের জন্য সামাজিকভাবে এগিয়ে আসা। সেই সাথে পশু নির্যাতন আইনকে আরো কার্জকর করতে হবে। বর্তমান সময়ে দেখা যায়, পাড়া—এলাকায় ও মহল্লায় ডাষ্টবিন নেই। পলিথিন মোড়া করে ময়লা নিয়ে যাচ্ছে ময়লা সংগ্রহকারীরা। যার ফলে পথের কুকুর—বিড়ালরা উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের নাগরিক উদ্যোগে প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে ডাষ্টবিন করা উচিত। যাতে করে এসকল প্রানীরা খাবার খেয়ে বাঁচতে পারে। কিন্তু বরগুনার পোষা প্রানী নির্মম হত্যার ঘটনাটি খুবই হৃদয় বিদারক। নিহত কুকুরটির সদ্য জন্ম নেয়া পাঁচটি ছানা রয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। তবে মানুষেরই উচিত সেবার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাহলে সুন্দর এবং সুষ্ঠু পরিবশে তৈরী হবে। অন্যদিকে ভ’টানের দিকে তাকালে দেখা যায়, শতভাগ পথকুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রেকর্ড গড়েছে। ভুটানের রাজধানীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে শেরিং ঐতিহাসিক এই অর্জনের বার্তা দেন। তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে দেড় লাখের বেশি পথকুকুর এবং ৩২ হাজার পোষা কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে দেশীয় সংস্থার পাশাপাশি সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল অ্যানিমেল দাতব্য সংস্থা হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়া মহাদেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন পথকুকুর রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। তারা হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানায়। শুরুতে ছোট পরিসরে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ধীরে ধীরে তা গোটা দেশে ছড়িয়ে যায়। এই কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সংগঠনটি ৩২ জনের বেশি ভুটানের নাগরিককে উচ্চপর্যায়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। যা বিশে^র সকল দেশের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্তকারী সেবা মূলক কাজ। গৃহহীন প্রাণীদের মধ্যে সব থেকে বেশি নিগৃহীত বেওয়ারিশ প্রাণী কুকুর। যে কুকুরগুলো গৃহহীন ভাবেই বেঁচে থাকে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়নতত্ত্ব বলছে, সব প্রাণী, মানুষ, উদ্ভিদ, জল, প্রকৃতি সবার সমান অধিকার পৃথিবীর ওপর। কিন্তু অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করলে আমাদের এই বাসভূমি স্বাভাবিকভাবেই তার মানবিক রূপটি হারিয়ে ফেলবে। প্রকৃতির প্রতি অবজ্ঞা ও দখল দূষণের ফলে মরুময়তা, খরা, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুসারে কুকুর নিধন করলে ইঁদুর ও প্লেগের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। এসব গৃহহীন প্রাণীর জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে নানা সংস্থা গড়ে উঠেছে। সংস্থাগুলো স্বেচ্ছাশ্রমে গৃহহীন প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়ালদের খাবারসহ নানা রোগ বালাইয়ের সেবা দিয়ে থাকে।
তবে সরকারীভাবে কুকুর—বিড়ালের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে ব্যক্তি পর্যায় থেকে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আর নাগরিক হিসাবে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এসকল অবহেলিত প্রানীদের জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। নিয়ম মেনে প্রতিটি পাড়া—মহল্লায় নির্দিষ্ট স্থানে ডাষ্টবিন নির্মান করতে হবে। যাতে করে খাবারের উচ্ছিষ্ট এসকল প্রানীদের পর্যন্ত পৌছায়।

লেখক: মো.আরিফুর রহমান ,পেশা: সাংবাদিক।