সিটি রিপোর্টার: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত পনের বছরের অনেক মজলুমের চোখের পানির ফসলই হচ্ছে জুলাই—আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামীলীগের ১৫ বছর আর মইনুদ্দিন—ফখরুদ্দিনের দু’বছর এই ১৭ বছরের জুলুম—নির্যাতনের পরও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার কারণে। ৫ আগস্ট ছাত্র—জনতার আন্দোলনে ১৭ বছরের জুলুম নির্যাতনের কলঙ্কিত অধ্যায় থেকে মুক্ত হয়েছি। আজ দেশের যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি এটিকে ধরে রাখতে প্রতিটি শপথের কর্মীকে চরম ধৈর্য্যরে মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটিতে খুলনা মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলনে বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রুকনদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুমিনের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রির যে শপথ করা হয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য জামায়াতের প্রতিটি রুকনকে কাজ করতে হবে। মু’মিনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর হুকুমে চলবে এ শপথই নিয়েছেন রুকনরা। সুতরাং আল্লাহর হুকুমের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ রুকনদের নেই। ফ্যাসিবাদি সরকারের আমলে জামায়াতের ট্রাষ্টি সম্পত্তি আল—ফারুক সোসাইটি বেদখল করা হলেও আগষ্ট বিপ্লবের পর এই প্রথম ১৫ বছর পর এখানে রুকন সম্মেলন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এসেছেন। যাদের মধ্যে পাঁচ জনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে আ’লীগ আর বাকীদেরকে কারাগারে রেখে হত্যা করা হয়েছে। আজ দেশের যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি এটিকে ধরে রাখতে প্রতিটি শপথের কর্মীকে চরম ধৈর্য্যরে মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জামায়াতের প্রতিটি রুকনকে ধৈর্য্য আর সাহসের সাথে দ্বীন কায়েমের পথে এগিয়ে আসার আহবান জানান। পবিত্র কুরআনে রুকন শব্দকে খুঁটি, স্তম্ভ, পিলার বা ভার বহনের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে। যে কারনে জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা ও অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হলেও জামায়াত আজ দেশের একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত। এজন্য জামায়াতের প্রতিটি রুকনকে আরও দৃঢ় ও সাংগঠনিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি আহবান জানান। সাথে সাথে দ্বীনের কাজকে এক নম্বর বানানো ও ঈমানের পরীক্ষাকে পরীক্ষা হিসেবেই দেখতে হবে। এক কথায় ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সম্মেলনে মো. মোবারক হোসাইন বলেন, ফ্যাসিবাদি সরকারের শত জুলুম—নির্যাতনের পরও মহান আল্লাহর রহমতে জামায়াতে ইসলাম আজ জনগনের প্রানপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সম্মেলনে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে জামায়াতের প্রতিটি শপথের কর্মীকে জান ও মালকে কোরবানি করার মধ্যদিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে আল্লাহর রহমতে খুলনা মহানগর ও জামায়াতে ইসলামী একটি সফল রুকন সম্মেলন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে জামায়াতের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ভবিষ্যতেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। রুকন সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন। দারসুল কুরআন পেশ করেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন, মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ও জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান। রুকন সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমীর এডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা সেক্রেটারি শেখ মো. ইউনুস, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গউসুল আযম হাদী। রুকন সম্মেলনে বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রেরণা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ ও টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।