খুলনা: বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের অপসারণ ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ’র মাধ্যমে গতকাল খুলনার খালিশপুরের জনসভায় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকদের ১১ দফা বাস্তবায়নের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন শ্রমিক নেতারা। পুর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকাল ৩টায় খালিশপুর পিপলস গোলচত্বরে শ্রমিক জনসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদ।
জনসভার শুরুতে জেজেআই, ইর্ষ্টান, আলিম, ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম, দৌলতপুর ও খালিশপুর জট মিলের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন। মিছিলে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা পাট প্রতিমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর শ্রমিক জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিনত হয়। শ্রমিক নেতারা মঞ্চে ওঠার সাথে সাথে উপস্থিত হাজার হাজার শ্রমিক বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নেতাদের কর্মসুচি ঘোষনা করার দাবী জানান।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন স্টার জুট মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মোঃ আঃ মান্নান। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক খুলনা প্লাটিনাম জুট মিল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন।
জনসভায় বক্তৃতা করেন পরিষদের কার্যকরি আহবায়ক ক্রিসেন্ট জুট মিলস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন, জেজেআই মিলের সাধারণস সম্পাদক হারুন অর রশিদ মল্লিক, ইর্ষ্টান জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক এস,এম জাকির হোসেন, স্টার মিলের সভাপতি বেল্লাল মল্লিক, ইর্ষ্টান মিলের সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন, আলীম জুট মিল মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটু, জেজেআই মিলের সিবিএ নেতা মোঃ হাসান উল্যা, ক্রিসেন্ট মিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ পান্নু মিয়া, খালিশপুর জুট মিলের সভাপতি মিজানুর রহমান মানিক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, দৌলতপুর জুট মিলে এ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোঃ হেমায়েত উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আক্তার হোসেন, শ্রমিক নেতা মোঃ দ্বীন ইসলাম, মোঃ আবু জাফর, কাওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, হুমায়ন কবির, গাজী মাসুম, সরদার আলী আহমেদ, আঃ সালাম, আঃ রশিদ, আবু হানিফ, মোঃ নুরুল হক, হুমায়ন কবির খান, ইজদান আলী খান, মোঃ হানিফসহ সিবিএ-নন সিবিএ নেতারা। এ সময় শ্রমিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতা করেন খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মীর মোকেসেদ আলী, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আরব আলী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
জনসভায় শ্রমিক নেতারা বলেন, বিজেএমসির আওতাধীন সকল মিল সমূহে প্রায় ৮৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী জড়িত। পাট ও পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিজেএমসিতে দক্ষ লোকের অভাব। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা সময়মত মজুরী, বেতন পাচ্ছেনা। এ শিল্পর সাথে প্রায় ৩ কোটি মানুষ জড়িত এ বিপুল জনগোষ্ঠি আজ দেশী-বিদেশী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের স¦ীকার। এ সময় মজুরী কমিশন ঘোষনা, প্রত্যেক মিলে বকেয় মজুরী, ২০% মহার্ঘ ভাতা, ৫০২ নং সার্কুলার অনুযায়ী মুজরী প্রদান, খালিশপুর, দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকদের স্থায়ী করে অন্যান্য মিলের নিয়মে মজুরীর ব্যবস্থাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবী জানান। শ্রমিক নেতারা বলেন বিজেএমসির দুুর্নীতির কারনে আজ সারাদেশে পাটকল গুলিতে শ্রমিক অসন্তোস বিরাজ করছে। বিএমআরই ছাড়া ৭০ বছরের পুরানো যন্ত্রপাতি দিয়ে পাটকল গুলি চলছে। অদক্ষ, অব্যবস্থাপনায় টার্গেট উৎপাদন দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
বিজেএমসির কর্মকর্তাদের প্রতারক আখ্যা দিয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবসর নেয়ার পর তাদের পি,এফ, গ্রাচ্যুইটি অর্থ প্রদান করেনি। বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা অবসর প্রাপ্তদের ধোকা দিয়েছে। এমনিক মৃত শ্রমিকের বীমার টাকাও প্রদান করেনি বিজেএমসি। পাটকলে উৎপাদিত পাটজাত পন্য বিদেশে রপ্তানি করতে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। পণ্য বিক্রি হলেও মিলগুলিতে ৫ থেকে ১২ সপ্তাহ মজুরী প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্মকর্তারা। শ্রমিকদের গায়ের ঘাম কর্মকর্তাদের ভোগ বিলাস বলেও বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকল শ্রমিকের বকেয়া মজুরী প্রদান এবং মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন না হলে অন্দোলন চলবে বলে শ্রমিক নেতারা বক্তৃতায় বলেন।