খুলনা : টানা ২১ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার উৎপাদনে ফিরেছে খুলনার দুই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল। স্থানীয় আ’লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে দুই সপ্তাহের মজুরী দেয়ার শর্তে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে উৎপাদন দেয়া শুরু করেছে বলে মিল সুত্রে জানা গেছে। বকেয়া মজুরীর দাবীতে খুলনাঞ্চলের আট পাটকল গত ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা।
সূত্র জানায়, মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন, ২০% মহার্ঘ ভাতা, ৫০২ নং সার্কুলার অনুযায়ী মজুরী প্রদান, খালিশপুর, দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ মোট ১১টি দাবী বাস্তবায়নের লক্ষে খুলনাঞ্চলের পাটকলগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা ১৮ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে মিল কর্তৃপক্ষ সপ্তাহিক মজুরী প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। আন্দোলন চলাকালে শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
গতকাল খালিশপুর থানা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ,কে,এম সানাউল্যাহ নান্নু, ১৩নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি জিয়াউল আলম খোকন, বিজেএমসি খুলনা জোনের সমন্বয়কারী গাজী শাহাদাৎ হোসেন, দৌলতপুর জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও খালিশপুর জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ শফিকুল ইসলাম মিলের শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ বৈঠকে খালিশপুর জুট মিলে বকেয়া ৫ সপ্তাহ এবং দৌলতপুর জুট মিলে বকেয়া ৩ সপ্তাহের মজুরীর মধ্যে দুটি মজুরী প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা সকাল ১০টায় এবং খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা বেলা ২টায় কাজে যোগদান করেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, আন্দোলন চলাকালে মিলের শ্রমিকদের বকেয়া ৫ সপ্তাহের মজুরীর মধ্যে ২টি মজুরী প্রদান করা হয়েছিল। আলোচনায় সমঝোতা হওয়ায় আজ প্রায় সাড়ে ৫শ শ্রমিককে দুটি মজুরী প্রদান করা হচ্ছে। তার মিলে সপ্তাহিক মজুরী সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ২২ লাখ টাকা মজুরী প্রদান করার জন্য ব্যংক থেকে টাকা উত্তেলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রমিকরা দুই সপ্তাহের মজুরী হাতে পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন শ্রমিক নেতা হেমায়েত উদ্দিন।
অন্যদিকে আ’লীগ নেতারা ও কর্মকর্তারা মিলের শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বেলা ১২টায় বৈঠক করেন। বৈঠকে ৫ সপ্তাহের মজুরীর মধ্যে বৃহস্পতিবার ২টি এবং পরবর্তী সপ্তাহে বাকি মজুরী প্রদানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে সম্মত হয়। খালিশপুর জুট মিলে দুই সপ্তাহের মজুরী বাবদ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রদান করার প্রস্ততি নিয়েছেন বলে মিলের প্রকল্প প্রধান সফিকুল ইসলাম জানান। বিকেল থেকে শ্রমিকদের মজুরীর শ্লিপ দেয়া হয়েছে। রাত থেকে শ্রমিকরা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তেলন করছেন বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল চালু হলেও ক্রিসেন্ট মিলে ৮ সপ্তাহের মজুরীর ১২ কোটি টাকা, প্লাটিনাম মিলে ৮ সপ্তাহের মজুরীর প্রায় সাড়ে ১০ কোটি, স্টার জুট মিলে ৫ সপ্তাহের বকেয়া মজুরীর ২ কোটি ৭৫ লক্ষ, জেজেআই জুট মিলে ১১ সপ্তাহে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ, আলিম জুট মিলে ৮, সপ্তাহে ১ কোটি ৯২ লক্ষ, এবং ইর্ষ্টান জুট মিলে ৬ সপ্তাহের মজুরীর ২ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে।