জয় মহন্ত অলোক, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক আব্দুল কাদের হত্যা মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকী দিচ্ছে আসামীরা। এতে করে আংতঙ্কে দিন পার করছে সদর উপজেলা চিলারং ইউনিয়নের ওই কৃষক হত্যা মামলার বাদী সামসুল হক।
পুলিশ হত্যা মামলার আসামী গ্রেপ্তার না করে উল্টো আসামীকে খুঁজে দেওয়ার জন্য মামলার বাদীকে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ করেন নিহত পরিবারের স্বজনরা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান তেলিপাড়া গ্রামের ২৫ শতক জমি নিয়ে সামসুল হকের সঙ্গে প্রতিবেশি সৈয়দ আলীর বিরোধ চলছিল। গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সামসুল হক ওই জমিতে তার রোপন করা আমন ধান কেটে শুকাতে দেয়। গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সৈয়দ আলীর নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত ওই জমি থেকে সামসুল হকের শুকাতে দেয়া ধান আঁটি বেঁধে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় সামসুল হকসহ তাঁর পরিবারের লোকজন বাঁধা দিতে গেলে সৈয়দ আলী ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় সৈয়দ আলীসহ তার লোকজন ধারালো ছোড়া ও বল্লম দিয়ে কুপিয়ে সামসুল হকের ছেলে রাসেল রানা, ছোট ভাই আব্দুল কাদের, ছোট ভাই নজরুল ইসলাম ও মা মাহামুদা বেওয়াকে জখম করে।
পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় কৃষক আব্দুল কাদের, নজরুল ইসলাম, রাসেল রানা ও মাহামুদা বেওয়াকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড়টার দিকে আব্দুল কাদের মারা যান।
এ ঘটনায় গত রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) সামসুল হক বাদী হয়ে সন্ত্রাসী মাহাবুব, আবুল, আব্দুল খালেক, সৈয়দ আলী, আব্দুল মান্নান, আশরাফ, আব্দুল বারেক, রেজাউল, জয়নুল সহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামী করে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এ দিকে মামলায় অজ্ঞাত নাম থাকার সুযোগ নিয়ে সদর থানার ওসি (তদন্ত) ওই এলাকার সাধারণ মানুষদের হয়রানী করছে ও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় বকুল আলী বলেন, আব্দুল কাদের হত্যা মামলায় পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। মূল আসামীদের গ্রেপ্তার না করে পুলিশ সাধারণ মানুষদের হয়রানী করছে। তাই আমরা চাই মামলার আসামীদের দ্রুত পুলিশ গ্রেপ্তার করুক।
আলেমা খাতুন বলেন, সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে নির্মমভাবে আব্দুল কাদেরকে হত্যা করে। আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে; পুলিশও তাদের গ্রেপ্তার করছে না। পুলিশ ওই সময় ৩ জনকে আটক করলেও তারা জামিনে বেড়িয়ে পড়েছে।
মামলার বাদী সামসুল হক বলেন, আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্য চলাফেলা করছে। পুলিশকে মূল আসামী সহ অন্য আসামীদের ছবি, মোবাইল নম্বর, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। তারপরও পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করে না। উল্টো পুলিশ আমাকে বলছে, আসামীদের খুঁজে দেন তাহলে তাঁরা আসামীদের গ্রেপ্তার করবে। শুধু তাই নয়, আসামীরা প্রকাশ্যে চলাফেলার করায় তাঁরা আমাকে সহ আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের মামলা তুলে নেওয়াসহ হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মামলার মূল আসামী মাহাবুব এর বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা মোমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. কফিল উদ্দীন বলেন, আব্দুল কাদের হত্যা মামলার তিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী মামলার মূল আসামীসহ অন্য বাকীদের গ্রেফতার করা হবে। কোন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।