কে এইচ মনি, খুলনা : খুলনায় ওয়াসার পানি সরবরাহের একটি প্রকল্প প্যাকেজের আওতায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে বিভিন্নভাবে গর্ত খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। মূল রাস্তার ওপর পাইপ, বড় বড় মেশিন, রাস্তা কাটা মেশিন, সুরকির বিশাল স্তুপ রাখা হয়েছে। ওই সব কাজে চলতি পথে পথচারিদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই। তেমনি মেইন সড়কের রাস্তার ওপর বালির স্তুপ ও ইট-বালি ও রড ফেলে রাখায় জনভোগান্তি এখন চরমে। চোখে ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে রাস্তায় ফেলা রাখা বালিকণা মানব শরীরের প্রবেশ করে নানা সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র চোখে পড়ে।
খুলনা ওয়াসার ডিএমডি মোঃ কামাল উদ্দিন শুক্রবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন সড়কে তাদের অসমাপ্ত কাজ শুক্রবারও চলমান রয়েছে। নগরীর সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, শান্তিধাম মোড়, রায়েরমহলসহ বিভিন্ন সড়কে কাজ চলছে। তাদের এই কাজে জনভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, কাজটি জনগণের উন্নয়নের জন্য করা হচ্ছে। এতে মাঝেমধ্যে সাধারণ জনগণও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগামী বর্ষার আগেই তাদের এই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে, সে কারণে বন্ধের দিনেও কাজ করতে হচ্ছে।
নগরীতে যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রীর নামে যত্রতত্র রাখার বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল হালিম এ প্রতিবেদককে বলেন, ফুটপাত দখলকারী ও বিভিন্ন সড়কে রাস্তা দখল করে নির্মাণ সামগ্রী ইট-বালু, খোয়া যাতে না রাখা হয় সেজন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা অভিযান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক স্থানে বিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জরিমানাও করা হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ শৈলান্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, রাস্তার পাশে যত্রতত্র ফেলে রাখা বালি ও ধূলিকণা মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা। ওই সব বালুর কণা শিশু বাচ্চাদের চোখে গেলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারেন।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে ওয়াসার কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, শান্তিধাম মোড়ে ও রায়েরমহলে এলাকায় ওয়াসার কাজে রাস্তা বন্ধ করে কাজ চলছে। পাইপলাইন বসানোর কাজ চলমান থাকায় কোথাও যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঘোষণা ছাড়াই কোনো কোনো এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও পথচারিরা। ওয়াসার কাজের যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি রাখার কারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক স্থানে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলেও তা কার্পেটিং না করে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ধূলাবালি উড়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়কের হাবিবুর রহমান নামে এক পথচারি বলেন, প্রচারণা ছাড়াই ওয়াসা একের পর এক রাস্তা বন্ধ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগে থেকে না জানায় অনেক সময় রাস্তায় এসে আবার ফিরে অন্য রাস্তায় যেতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি তেমনি সময়মতো গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। কিছু দিন আগে সিটি কর্পোরেশন রাস্তা মেরামত করেছে। সেসব রাস্তা এবার ওয়াসা খনন করছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ওয়াসার কাজের ভোগান্তির পাশাপাশি তাদের এই সড়কে নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার ওপর যত্রতত্র ফেলা রাখা হচ্ছে। এ সব দেখভাল করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আজও পর্যন্ত জোরালোভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি চোখে পড়েনি। শুধু মাইকিং করে দায়সারা কাজ করছেন। স্কুল পড়–য়া ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করার সময় চোখের মধ্যে ধূলিকণা ও বালি পড়ে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর কমার্স কলেজের সামনে, সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, টিবি ক্রস রোডসহ শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও মূল সড়কের ওপর নির্মাণ সামগ্রীর ইট-বালু, খোয়া রাস্তা দখল করে কেউ ব্যবসা করছেন, কেউ বা নিজের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখছেন। এতে অনেক সময় পথচারিরা বিভিন্ন ছোটখাট দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।