সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা শহরের বিলাস বহুল একটি বাড়ি নিয়ে দুই শীর্ষ চোরচালানীর দ্বন্দ চরম আকার ধারন করেছে। যে কোন সময় সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন। এই দুই চোরাচালানীরা হচ্ছেন জনৈক মনি ও গোল্ডেন মিলন। এই দুই জনকে নিয়ে সাতক্ষীরা শহরের ওলিতে গলিতে এখন আলোচনার ঝড় বইছে। আর এদের নেপথ্যে রয়েছেন এই জেলার শীর্ষ চোরাকারবারী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের তালিকাভুক্ত এক শীর্ষ সন্ত্রাসী।
জানা গেছে, গোয়েদা সংস্থাসহ সরকারেরর উর্দ্ধতন মহলে জেলার শীর্ষ চোরাকারবারির তালিকায় রয়েছে এই তিন চোরাকারবারীর নাম। আর এই চোরাকারবারী করেই তারা রাতারাতি হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই জেলার আর এক শীর্ষ চোরাকারবারী রাতারাতি কোটি পতি বনে যাওয়া জনৈক জাহাঙ্গীর সাতক্ষীরা শহরতলীর মাগুরা দাসপাড়া গ্রামে একটি বিলাস বহুল বাড়ি তৈরী করেন। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার চোরাচালানী পন্যের একটি বড় চালান চোট খ্ওায়ায় তিনি সব হারিয়ে ফিরে যান তার আগের অবস্থানে। তবে, উপরোক্ত তিন শীর্ষ চোরকারবারী থেকে যান বহাল তরিয়তে। জাহাঙ্গীর এ সময় তার বাড়িটি বিক্রি করেন এক সময়ের সোনার দোকানের কর্মচারি গোল্ডেন মিলনের কাছে। সেই সময়কার আইনশৃখংলা রক্ষাকারী এক কর্তা পরোক্ষ ভাবে গোল্ডেন মিলনের দিকে সুনজর দেওয়ায় মিলন থাকেন ধরা ছোয়ার বাইরে। কিন্তু তিনি সাতক্ষীরা ছেড়ে যেতে না যেতেই মিলন হয়ে যান একেবারেই ধরাসায়ী। সোনার বড় বড় চালান জব্দ হলেই সে সকল মামলায় আসামি হন এই গোল্ডেন মিলন। পুলিশের হাতে আটক হয়ে তিনি হাজত বাসও করেছেন। আর এই গোল্ডেন মিলনের ক্রয়কৃত বিলাস বহুল বাড়িটি নিয়ে এখন চলছে তার ও মনির মধ্যে প্রকাশ্য শক্তি প্রদর্শন ও আইনি লড়াই। ইতিমধ্যে মনি বাড়িটি তার দখলেও নিয়েছেন। আর এই দুই পক্ষ বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থান করায় চোরাকারবারী মনির পক্ষে পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এই জেলার শীর্ষ চোরাকারবারি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত এক শীর্ষ সন্ত্রাসী। যিনি বর্তমানে জেলা পরিষদের একজন জনপ্রতিনিধি। অপরদিকে মিলনের পক্ষে পরোক্ষ ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ক্যাডার মান্নান বাহিনী।
এ ব্যাপারে বহুল আলোচিত শফিউল্লাহ মনি সম্প্রতি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বেপরোয়া জীবন যাপনের এক পর্যায় মিলন পাল স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় (এসটিসি-১১/১৭) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারধীন। পরে যশোরে আরো একটি স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় আটক হয় মিলন পাল। একই সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় তার নামে একাধিক স্বর্ণ চোরাচালান মামলা দায়ের করে পুলিশ। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে আসার পর দারুন আর্থিক সংকটে পড়ে মিলন পাল মাগুরার দাসপাড়াস্থ তিনতলা বাড়িটি আমার কাছে এক কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চুক্তিবদ্ধ হন। একপর্যায় নগদ এক কোটি পয়ত্রিশ লাখ টাকা নিয়ে বাড়িটি আমার কাছে হস্তান্তর ও দখল বুঝিয়ে দিলে আমি বাড়িটি চার তলায় রূপান্তরিত করি। পরবর্তীতে বাড়ি আমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দিতে বললে মিলন পাল টালবাহনা শুরু করেন। চাপ প্রয়োগের এক পর্যায় গত ১৯ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিলন পাল ও তার বাবা খিতেশ পাল দাসপাড়াস্থ আমার ক্রয় করা বাড়ি আসে এবং রেজিঃ করে দেয়ার জন্য আরো ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি ওই টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা বাড়ির বাইরে গিয়ে গেটের কাছে দাড়িয়ে মিলন আমাকে ডাক দিয়ে বলেন আরো ৫০ লাখ টাকা না দিলে বাড়ি রেজি: করে দিব না। তখন আমি টাকা ফেরত চাইলে গেটের বাইরে লুকিয়ে থাকা মিলন পালের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য মান্নান, আলাউদ্দিন ও মিথুন আমার উপর হামলা চালিয়ে মাথায় আঘাত করে আমার কাছে থাকা ১৫ লাখ টাকা ও গলার স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে মিলনসহ অন্যরা পালিয়ে যান। এঘটনায় আমি সাতক্ষীরা আমলী প্রথম আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
অপরদিকে, মিলন পালের স্ত্রী শম্পারানী পাল সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি মনি তার বাহিনি নিয়ে শহরের কাটিয়া এলাকায় তার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তার বাড়ি থেকে কাগজ পত্র মালামাল লুট পাট করে। এলাকার লোকজন এতে বাধা দিলে মনির লোকজন তাদের মারপিট করে। আহতদের সাতক্ষীরা ও খুলনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আরো জানান, মনি জাল জালিয়াতি কাগজপত্র তৈরি করে তার লোক জন নিয়ে বর্তমানে বাড়িটি দখলে নিয়েছেন। এখন মনি তাদের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করছেন। টাকা না দিলে বাড়ির দখল ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন। বাড়ি দখল করতে আসলে তাদের হত্যারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় মিলন পালের স্ত্রী শম্পা রানী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ো করেছেন ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই বিলাস বহুল বাড়িটি চোরাকারবারীরা টাকা ভাগাভাগির সময় লেনদেন করতে তারা হাত বদল করে থাকে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেরিনা আক্তার জানান, মিলন পালের স্ত্রীর শম্পা রানী দায়েরকৃত মামলাটি রেকর্ড করার জন্য সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।