এস এম জামাল, কুষ্টিয়া : রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীর স্বজন, নার্স, পুলিশ ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের বিশৃঙ্খলায় চরম ভোগান্তিতে সাধারণ রোগীরা । ঘটনার সূত্রপাত বেলা সোয়া দুইটার দিকে । ভর্তিকৃত রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নার্স,হাসপাতালেরই স্টাফ ও পুলিশদের রোগীর স্বজনদের ওপরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া এলাকার বশির আহমেদ (৬০) শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। বেলা দুইটার দিকে তিনি মারা যান। রোগীর কয়েকজন স্বজন অভিযোগ করেন, তাঁরা অক্সিজেন চেয়েও পাননি। এ জন্য তাঁদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ অভিযোগে রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন। ওয়ার্ডের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালে আসার পর বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ওই রোগী এমনই অভিযোগে স্বজনরা নার্সদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে নার্স ও ডাক্তারদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ডাক্তার নার্স ও রোগীর স্বজনরারা বাকবিতন্ডায় জরিয়ে পরে। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন রাশেদ নামের এক পুলিশ সদস্য। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই পুলিশ সদস্য লাঠিচার্জ শুরু করেন রোগীর স্বজনদের উপর। এক পর্যায়ে পুলিশ ডাক্তার নার্স ও রোগীর স্বজনদের হৈ- হট্টগোলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সেখানে। প্রত্যক্ষদর্শী রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানায়, রোগীর স্বজনরা কান্নারত অবস্থায় রোগীর ফাইল ছুরে দিলে নার্স ও ডাক্তার চড়াও হয় । এ নিয়ে ডাক্তার নার্স ও রোগীর স্বজনদের তুমুলঝগড়া শুরু হলে সেখানে পুলিশই প্রথমে রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা চালায়। এতে রোগীর স্বজনরাও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জরিয়ে পরে। এ সময় অন্যান্য রোগী ও স্বজনরা অতংকিত হয়ে পরে। পরে কুষ্টিয়া সদর থানা থেকে আরো পুলিশ সদস্যরা ঘটনা স্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। হাসপাতালের কর্রব্যরত পুলিশ সদস্যা রাশেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খবর পেয়ে তিনি ছুটে যান ওয়ার্ডে। সেখানে গিয়ে তিনি রোগীর উত্তেজিত স্বজনদের বোঝানোর চেষ্টা করলে স্বজনরা তার উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে তার জামা টেনে ধরে এবং অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরে সংবাদ পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিকে এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাহিরে এসে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করতে থাকে। এ সময় জরুরী বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পরে স্বজনরা। এ ছাড়াও এর কিছু সময় পরে ৩ নং মহিলা ওয়ার্ডে মৃত্যু হয় পোড়াদহ বাগডাঙা গ্রামের ইয়াকুব শেখের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৭৫)। চিকিৎসক না থাকায় মৃত সনাক্ত করার মত কোন ডাক্তার হাসপাতালে না থাকায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে পরে লাশ নিয়ে চলে যায় স্বজনরা। রোগীর স্বজন খাজামদ্দিন শেখ জানান, বিকেলের দিকে আমার মায়েল শারিরীক অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তারকে বারবার ডাকা হলেও আসেনি। সন্ধ্যার আগে আবারো নার্স ও ডাক্তারকে বারবার ডাকলে ধর্মঘটের কারনে রোগী দেখতে আসতে পারবে না বলে জানায় এর কিছুক্ষণ পর সাড়ে ৬টার দিকে ছটফট করতে করতে মারা যায়। তবে মৃত্যু নিশ্চিত কি না তা জানতেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এছাড়াও সন্ধ্যায় হাসপাতালের স্ক্যানুওয়ার্ডে মিরপুর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের হাজ্জাদের ৩ দিন বয়সের এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয় । কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘ভিজিটিং কার্ডটি উদ্ধার করা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। অন্তরকে আটকের চেষ্টা চলছে।’ রাতে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আর এম ও) ডা: তাপস কুমার সরকার জানান, ঘটনার পর পরই চিকিৎসকরা কিছু সময়ের জন্য কর্মবিরতিতে গিয়ে ছিল। এখন পরিস্থিত স্বাভাবিক। আর কোন সমস্যা নেই।