আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : আগামীকাল ৩ রা মার্চ শনিবার খুলনায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে অবহেলিত উপকুলিয় দূর্যোগ প্রবন উপজেলা দাকোপের নদীভাঙন রোধ, অভ্যান্তরীন সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, গল্লামারী টু নলিয়ান সড়ক নির্মান, ঝপঝপিয়াসহ একাধীক নদীতে ব্রীজ নির্মান, চালনা পৌরশহর রক্ষা বাঁধ নির্মান, নলিয়ানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলাসহ উন্নয়ন বঞ্চিত দাকোপবাসী ন্যায় সঙ্গত অধিকার চায়। এবারের সমাবেশে দাকোপ উপজেলা আওয়ামীলীগ ১০ সহ¯্রাধীক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৮ সালে একবার জাপানেতার সতন্ত্র এমপি ছাড়া সকল নির্বাচনে আওয়ামীলীগের জয়জয়কার দাকোপকে দলটির দূর্গ হিসাবে দেখা হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচীত হয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক শাসনামলে দাকোপবাসী অতীতের সকল বঞ্চনার অবসান হবে এমন আশায় বুক বেধেছিলো। কিন্তু বাস্তব চিত্র প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে বিস্তর ফারাক। অথচ পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলো ক্রমান্বয়ে সফল উন্নয়নের পথে। আগামীকালের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ৯৯ টি প্রকল্পের মধ্যে দাকোপের আছে মাত্র ২ টি প্রকল্প। যার মধ্যে খুলনার গল্লামারী হতে নলিয়ান পর্যন্ত সড়ক নির্মান কাজ এবং চালনা মোবারেক মেমোরিয়াল কলেজের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন। গল্লামারী নলিয়ান সড়কটির নির্মান কাজ চলমান আছে। কিন্তু বিগত সাংসদ ননীগোপাল মন্ডল সড়কের রুট পরিবর্তন করে পোদ্দারগঞ্জের সাথে সংযুক্ত করায় এ ক্ষেত্রে সব থেকে অবহেলিত কামারখোলা সুতারখালীবাসীর জনদাবী উপেক্ষিত হয়েছে। উপজেলাবাসী ওই সড়কটি খোনা নদীতে ব্রীজ সংযুক্তির মাধ্যমে সরাসরী নলিয়ানের সাথে সংযোগের দাবী করেছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত নদী ভাঙনরোধ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন, ঝপঝপিয়া এবং পোদ্দারগঞ্চে ব্রীজ নির্মান, চালনা পৌরশহর রক্ষা বাঁধ নির্মান, নলিয়ানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, চালনা পৌরসভাকে প্রথম শ্রেনীতে উন্নিত করা, উপজেলা সদরের সাথে সকল ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, চালনা এম এম কলেজকে সরকারী করন, উপজেলা সদরে সরকার ঘোষিত ষ্টেডিয়াম নির্মান, উপজেলা ফায়ার ষ্টেশন নির্মান, উপজেলা মডেল মসজিদসহ নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ সকল মসজিদ মন্দির নির্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট ঘোষনার দাবী এলাকাবাসীর। দূর্যোগপ্রবন দাকোপে বর্তমানে থাকা ৪৬ টি সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে বর্তমানে অর্ধেক ব্যবহার অনুপযোগী। যে কারনে উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সাইক্লোন শেল্টার নির্মান এ অঞ্চলের মানুষের প্রানের দাবী। ৫০ শষ্য বিশিষ্ঠ দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পাশ্ববর্তী ৪ টি উপজেলার শতাধীক রোগীদের সার্বক্ষনিক সেবা নিতে দেখা যায়। হাসপাতালটিতে ২৪ জন ডাক্তারের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৪ জন। এখানে চাহিদার বিবেচনায় শষ্যবৃদ্ধি, ডাক্তার নার্সসহ অন্যান্য জনবল সংকট দুর করা অতি আবশ্যক। বিগত আইলায় ২১ মাস পানিবন্দি থাকা উপজেলার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ এখন সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সর্বহারা অনেক পরিবার এখন বাঁধের উপর বসবাসে বাধ্য হচ্ছে। এর উপর এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস্য নদীর চিংড়ীপোনা আহরন সরকারী নিষেধাজ্ঞায় বন্দ হয়ে গেছে। বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা না করে চিংড়ীপোনা আহরন বন্দ হওয়ায় তাদের জীবন জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার পথে। তার উপর দীর্ঘদিনের ব্যাংক লোন সুদসহ এখন তাদের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা কোন উপায়ন্তর না পেয়ে লোন মওকুপে এখন তাকিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে। সুন্দরবন ও নদীবেষ্টিত এই দাকোপ একটি সম্ভবনাময় উপজেলা। কেবলমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা আর বিদ্যুৎ সুবিধায় পাল্টে যেতে পারে দাকোপের সার্বিক জীবনযাত্রার মান। দেশের অর্থনীতিতে রাখতে পারে বিশেষ অবদান। সে কারনে উন্নয়ন বঞ্চিত দাকোপবাসী এবার ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ে শেখ হাসিনার আগামীকালের সমাবেশে দলমতের উর্দ্ধে থেকে অংশ নেবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অপরদিকে দাকোপ উপজেলা আওয়ামীলীগ অতীতের যে কোন সমাবেশ অপেক্ষা ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে। গত কয়েকদিন চলেছে দলের ব্যানারে বিরামহীন প্রচারনা। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন জানিয়েছেন লঞ্চ ট্রলার ও গাড়ী পথে এবার ১০ হাজারের অধীক লোক দাকোপ থেকে সমাবেশে যোগ দেবে। এরমধ্যে অর্ধেক পরিমান নারী সমর্থক উপস্থিত হবে বলে তারা আশা করছেন।