ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি: ফুলতলা উপজেলার উত্তর আলকা চৌদ্দমাইল এলাকার ঠিকাদার ও মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী আজাদ গাজী (৩৫) হত্যা মামলার আসামীরা খালাস পেলেও ১৯০৮সনের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩/৬ ধারায় ৬ চরমপন্থী আসামীর প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। একই সংগে তাদের ৫০হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫বছর সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। রায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নিহতের স্ত্রী সোহেলী জুই পপি।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের ভুঁইয়া পাড়ার মৃত নূর মোহাম্মদ ভুঁইয়ার ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু ভুঁইয়া (২৬), বুড়িয়ারডাঙ্গা পাকারমাথা এলাকার মৃত ফিরোজ আহম্মেদের ছেলে আকতার জামিল ওরফে বনি (২৭), নড়াইল জেলার গোবরা থানার গোয়ালবাড়ি গ্রামের মৃত বরকত আলীর ছেলে মোঃ আলম শেখ (২৭), লোহাগড়া থানার চরকালিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মনিরুল ইসলাম ওরফে পিটপিটে সুমন (৩৪), গোবরা থানা সদরের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আল মামুন ওরফে বোমারু মামুন (৩৫) ও নড়াইল জেলা সদরের আগদিয়ার চর এলাকার দেবেন্দ্রনাথ বৈরাগীর ছেলে বিপুল বৈরাগী (৪৬)। বুধবার খুলনার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম সোলায়মান এ রায় ঘোষনা করেছেন। রায় ঘোষনাকালে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু ভুঁইয়া আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বাকী ৫ আসামী পলাতক রয়েছেন। গত ২৪ মে খুলনার অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ নুরুল আমীন বিপ্লব এ মামলার হত্যা অংশে আকতার জামিল ওরফে বনিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ এবং অপর ৫ আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন।
বেঞ্চ সহকারী মোঃ ছায়েদুল হক শাহীন নথীর বরাত দিয়ে জানান, ২০১০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফুলতলা উপজেলার উত্তর আলকা চৌদ্দমাইল এলাকার মোঃ সোহরাব গাজীর বাড়ির নিচ তলায় ৩টি বোমা নিক্ষেপ করে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। এ সময় ঘরের মধ্যে থাকা মোঃ সোহরাব গাজীর মেঝ ছেলে ঠিকাদার ও মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী আজাদ গাজী (৩৫) এর নাড়ী ভুড়িসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সোবহান গাজী বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের নামে ফুলতলা থানায় মামলা দায়ের করেন (নং-৯)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র এসআই মুক্তরায় চৌধুরী পিপিএম ৬জনকে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন আসামীরা সকলেই পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। তারা নিহত আজাদ গাজীর নিকট ৩০লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা দিতে অস্বীকার করায় পরিকল্পিতভাবে বোমা মেরে আজাদ গাজীকে মোবা মেরে হত্যা করে আসামিরা। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী ছিলেন বিশেষ পিপি আরিফ মাহমুদ লিটন। মামলার রায়ের পর নিহত আজাদ গাজীর স্ত্রী সোহেলী জুই পপি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আশা করেছিলাম খুনিদের কারো হয়তো ফাঁসি হবে। তবে সেটি না হলেও যাবজ্জীবন সাজাতো হয়েছে। নিরাপত্তার সাথে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করাই এখন মুল চ্যালেন্স।