সেলিম হায়দার, তালা: কপোতাক্ষের নাব্যতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে ২০১১ সালে শুরু হওয়া সরকারের ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন প্রকল্প একটি মাত্র ক্রসড্যাম স্থাপনে মন্থর গতিতেই ভেস্তে যাচ্ছে। নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে দ্রুত ক্রাসড্যাম স্থাপন ও টিআরএম বিল ব্যবস্থাপনা ও পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। একটি বেসরকারি এনজিও ও উপজেলা পানি কমিটির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন হলেও হুশ হচ্ছেনা কতৃপক্ষের।
কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে সরকার গত ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে (১ম পর্যায়)’ পাখিমারা বিলে টিআরএম স্থাপন ও প্রায় ৯০ কিমি. নদী খনন করে। টিআরএম চলাকালে মূল নদের উপর ক্রসড্যাম দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারবাহিত পলি উপরাংশে না ঢুকিয়ে টিআরএম প্রকল্পের বিলে প্রবেশ করানো হয়। এরপর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বিস্তীর্ণ জনপদের পানি নিষ্কাশনে তুলে দেয়া হয় ক্রসড্যাম। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৬-১৭ সালে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পায় কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ । তবে সর্বশেষ ড্যামটি অপসারণ হলেও নতুন করে স্থাপন না হওয়ায় প্রতিদিন জোয়ারবাহিত প্রচুর পরিমাণে পলি টি.আর.এম এর উজান অংশে ঢুকে দ্রুত গতিতে নতুন করে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে নদীতে ক্রসড্যাম না দেয়ায় মূলত ভেস্তে যেতে বসেছে মূল প্রকল্প। সূত্র জানায়,গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ক্রস ড্যমটি ১৬ জুন পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশসহ নির্দেশনা দেয় পাউবো। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্যামটির নির্মাণ শুরু করলেও শম্ভুক গতিতে মার্চের শেষ ভাগেও তা শেষ করতে পারেনি। কাজের এমন মন্থর গতির বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেননা জনপদের ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণবাসী। তাদের দাবি,বিশেষ কারণে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে কাজের গতি বিলম্বিত করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও তা স্বীকার করে বলছেন,গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ মৌসুম শেষে কপোতাক্ষ দিয়ে জেলেদের অসংখ্য নৌকা বাঁধাহীন ভাবে ঢুকতে তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েই মূলত এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষীরা জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে তাদের কাজকে বাঁধাগ্রস্থ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান,তালার জনৈক হিমাংশু ও মিন্টু এবং বাওখোলার সরোজিৎ জেলেদের প্রায় ৪ শ’নৌকা প্রতি টাকার চুক্তিতে দ্রুত ক্রসড্যাম দেয়ার কাজকে নানাভাবে বাঁধাগ্রস্থ করছে।
এদিকে উত্তরণ ও পানি কমিটির যৌথ বিশেষজ্ঞদের দাবি,ক্রসড্যাম নাথাকায় পলিযুক্ত জোয়ারবাহিত প্রতি লিটার পানিতে প্রায় ৫০ গ্রাম পলি নদীতে অনুপ্রবেশ করছে। তারা এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে ক্রসড্যাম স্থাপনের তাগিদ দিয়ে ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্পের সফলতায় আশংকার কথা জানিয়ে গত ২০ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই পাখিমারা টিআরএম বিলের চারিধারের পেরিফেরিয়াল বাঁধের জরুরী সংস্কার দাবি করেছেন বিল অধিবাসীরা। এরআগে পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌছেছিল বলেও জানান তারা। সর্বশেষ টিআরএম প্রকল্পের নিকটবর্তী ক্রসড্যাম স্থাপনে বিলম্ব হওয়ায় মূল প্রকল্পটিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। উত্তরণের গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে দেখা যায়,প্রকল্পটির সঠিক সুফল পেতে সংযোগ খালের মাধ্যমে বেসিনের দূরবর্তী পশ্চিমাংশে যাতে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে পলি অবক্ষেপিত হতে পারে তার ব্যবস্থা জরুরী। এলাকাবাসীর পক্ষে অতিদ্রুত পাখিমারা টিআরএম বিলের বালিয়া কাটপয়েন্টে নদীর উজানমুখে ক্রসড্যাম স্থাপন, জরুরীভাবে পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার, গুরুত্ব প্রদান করে পাখিমারা টিআরএম বেসিনের দূরবর্তী পশ্চিমাংশে পলি অবক্ষেপনের ব্যবস্থা করা এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে নদীতে ক্রসড্যাম না দিয়ে তিন মাস পর ক্রসড্যাম দেয়ার কারণ তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি করা হয়। এ সময় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় দ্রুত শুরু করারও দাবী জানানো হয়।
পাউবো যশোর জানায়,অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের আওতায় পাখিমারা টিআর এম লিংক ক্যানেলের উজানে কপোতাক্ষ নদের ১৫৭.৫০ কিঃমিঃ ক্লোজার নির্মাণ ও অপসারণ কাজের প্যাকেজ নং-জেএনবিডিআর। গত ৮ ফেব্রুয়ারী পাউবো যশোরের পুরাতন কশবার মিশন রোডের ঠিকাদার মোঃ নুর হোসাইনকে ৪৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৩ টাকার কাজটি প্রাপ্ত হন।
এব্যাপারে পাউবোর কেশবপুর পওর শাখার এসও ফিরোজ আহম্মেদের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান,আগামী ২৬/২৭ মার্চের মধ্যে ক্রসড্যামটি নির্মিত হবে। তবে বিলম্বের ব্যাপারে তিনি বলেন,কারণ যদি হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তবে তদন্তপূর্বক অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শামীম চাকলাদার বাবু বলেন,স্থানীয়দের কারণেই কাজটি বিলম্বিত হচ্ছে।