আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : খুলনার দাকোপ অঞ্চলে অবাধে পাচার হচ্ছে বনজ সম্পদ। অভিযোগ উঠেছে কৈলাশগঞ্জ টহল ফাড়ীর বনরক্ষিরা সুতারখালী ষ্টেশনের সহায়তায় চুক্তি ভিত্তিক মুল্যবান কাঠ পাচার অব্যহত রেখেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় বনরক্ষিদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় গড়ে উঠেছে কাঠ পাচারের একাধীক শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন খোজ নিয়ে জানা যায় দাকোপের সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম কৈলাশগঞ্জ শিংজোড়া, দাকোপ, কালীনগর, বানীশান্তা, বনলাউডোপ, সুতারখালী, কালাবগী সুতারখালী এলাকায় সংশ্লিষ্ট বনরক্ষিদের প্রত্যক্ষ মদদে গড়ে উঠেছে সুন্দরবনের মুল্যবন সুন্দরী কাকড়াসহ বিভিন্ন কাঠ ও অন্যান্য বনজ সম্পদ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জানা যায় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৪ মার্চ দাকোপ গেট এলাকা থেকে সুতারখালী ষ্টেশনের রক্ষিরা লক্ষাধীক টাকার কাকড়া কাঠসহ একটি ট্রলার জব্দ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে শিংজোড়া দাকোপ অঞ্চলের চিহ্নিত চোরাকারবারী সুরাজ মন্ডলসহ অপরাপর সদস্যরা ওই কাঠ বাজার জাতের উদ্দেশ্যে জড়ো করেছিল। তারা বনরক্ষিদের সহায়তায় ওই কাঠ মোকামে বিক্রির জন্য মজুদ করেছিল। বর্তমানে গোপন লেনদেনের মাধ্যমে জব্দকৃত ট্রলারটি ছাড়িয়ে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া চলছে। গত ৪ ঠা মার্চ শিংজোড়া শশ্মান ঘাট নদীর পাড়ে লক্ষাধীক টাকার কাঠ স্থানীয় জনৈক ইমরানের নজরে আসে। তিনি বিষয়টি তাৎক্ষনিক সুতারখালীর ষ্টেশন কর্মকর্তা শফিউর রহমানকে মোবাইলে জানালে তিনি বলেন ওখানে কাঠ আছে তাতে আপনার সমস্যা কি ? অভিযোগ মতে তপন মন্ডল, বিপ্লব মন্ডল, খোকন মন্ডল, সনজিত মন্ডল, ছোট্র মন্ডল, শিশির রায় নামের কাঠুরিয়ারা কৈলাশগঞ্জ টহল ফাড়ীর ওসি তাহের রহমানের সাথে চুক্তি ভিত্তিক কাঠ পাচার করে থাকে। কাকড়া কাঠ ৩০ মনের নৌকা ৫০০ টাকা, ৬০ মনের ১৫০০ টাকা, সুন্দরী কাঠ ৬০ মনের নৌকা ২৬০০-৩০০০ টাকার চুক্তিতে কেটে এনে তারা লোকালয়ে গড়ে ওঠা পাচারকারী সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে থাকে। মাঝ পথের সুতারখালী ফরেষ্ট ষ্টেশন এবং ঢাংমারী ষ্টেশনের বন কর্মকর্তারা আয়ের একটি অংশ গ্রহন করে নৌকাগুলো নিরাপদ যাতায়াতে সহায়তা করে বলে জানা গেছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন সুন্দরবন থেকে পাচার হচ্ছে মুল্যবান বনজ সম্পদ। অভিযুক্ত সুরাজ মন্ডল বলেন জব্দ হওয়া কাঠ কালীনগর এলাকার এক ব্যবসায়ীর, আর ট্রলারটি গৌরাঙ্গ নামের এক ব্যক্তির। এর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্ঠতা নেই। কাঠুরিয়া বিপ্লব তপনসহ অন্যদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল বন্দ পাওয়া যায়। কৈলাশগঞ্জ টহল ফাড়ীর ওসি তাহের রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উল্লেখিত ব্যক্তিদের আমি চিনিনা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুতারখালী ষ্টেশন কর্মকর্তা শফিউর রহমান বলেন, তথ্যদাতাকে এমন কথা বলার প্রশ্নই আসেনা, তবে শুনেছি আমাদের অনেকে এমন বলে। জব্দ হওয়া কাঠ ট্রলারের বিষয়ে তিনি বলেন বিষয়টি আমার উর্ধর্তন কর্ত্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার সহযোগীতায় কাঠ পাচারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। দায়িত্বশীলরা অস্বীকার করলেও সুন্দরবন থেকে নানা প্রক্রিয়ায় কাঠ পাচার হচ্ছে এ বিষয়টি নিশ্চিত। উপজেলার বিভিন্ন মোকাম ও স মিল গুলোতে অভিযান চালালে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। এলাকার সচেতন মহল বনজ সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।