ইউনিক ডেস্ক : যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের মামলায় গ্রেফতার হয়ে গত ১৭ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন সিডি ব্যবসায়ী থেকে ‘তারকা’ বনে যাওয়া হিরো আলম। জেলের সেলে ভালোই আছেন তিনি। বগুড়া কারাগার সূত্রে জানা গেছে, জেলের সেলে হিরো আলমের দিন কাটে শুয়ে-বসে; আলস্যে। সুযোগ পেলেই তিনি অন্য বন্দিদের সঙ্গে গালগল্পে মেতে থাকেন। এখনও স্বপ্ন দেখেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও একদিন মন্ত্রী হওয়ার।
হিরো আলমের দিন কীভাবে কাটছে তা জানতে যোগাযোগ করা হলে বগুড়া কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলার এসব তথ্য জানান।
জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদ্দাদ জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে হিরো আলমকে অধুমপায়ী সেলে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও ৩-৪ জন হাজতি রয়েছেন। গত ১৬ দিনের মধ্যে শুধু একদিন তার পরিবারের সদস্যেরা তাকে দেখতে এসেছিলেন। তবে তার স্ত্রী বা কোনও ভক্ত আসেননি।
তারা আরও জানান, অন্য হাজতিদের সঙ্গে গালগল্প করে সময় কাটে হিরো আলমের। তবে বেশিরভাগ সময় শুয়ে-বসে-ঘুমিয়ে সময় কাটান তিনি। বাইরের বা জেল ক্যান্টিনের নয়; জেলের খাবারই খান তিনি।
এই দুই কর্মকর্তা জানান, হিরো আলম তাদের বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘বড় কিছু নয়; এক্ষেত্রে জামিনও কোনও ব্যাপার নয়’। হিরো আলমের ভাষ্য, তিনি শিগগিরই জামিনে ছাড়া পাবেন এবং মামলায় নিরাপরাধ প্রমাণিত হবেন। স্ত্রীর সঙ্গে সৃষ্ট ‘ঝামেলা’ মিমাংসা করে নেবেন।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কী করবেন হিরো আলম –এ নিয়েও তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে দাবি করেন জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদ্দাদ। তারা জানান, হিরো আলম বলেছেন, জেল থেকে বেরিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোযোগী হবেন তিনি। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে তিনি তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ পেয়েছেন। সেজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন। তার বিশ্বাস, ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হবেন। তার জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতার দিকটা বিবেচনায় নিয়ে তাকে মন্ত্রী করা হবে। আর মন্ত্রী হলে নিজ এলাকা তথা বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করবেন।
জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদ্দাদ জানান, হিরো আলম এসব গল্প অন্য বন্দিদেরও সঙ্গেও করেন।
গত ৬ মার্চ হিরো আলমের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী সাদিয়া বেগম সুমিকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন সুমির বাবা সাইফুল ইসলাম খোকন। এদিন রাত ১০টার দিকে একই থানায় মামলা করতে গেলে হিরো আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরদিন ৭ মার্চ বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হিরো আলমকে হাজির করা হয়। ওই সময় হিরো আলমের আইনজীবী তার জামিন চাইলে শুনানি শেষে বিচারক তা নামঞ্জুর করে হিরো আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকে হিরো আলম বগুড়া কারাগারে রয়েছেন।
সিডি ব্যবসায়ী থেকে তারকা বনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলম। বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামে সিডি বিক্রি এবং পরে কেবল সংযোগের ব্যবসা করতেন তিনি। কেবল সংযোগের ব্যবসার সুবাদে মিউজিক ভিডিও তৈরি শুরু করেন। প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও এবং ৮০টি ইউটিউব চলচ্চিত্র ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তাকে নিয়ে ট্রল হয়। ‘মার ছক্কা’ নামে একটি চলচ্চিত্রেও নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। বলিউড পরিচালক প্রভাত কুমারের ‘বিজু দ্য হিরো’ নামে একটি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন তিনি। ইয়াহু ইন্ডিয়ার জরিপ অনুযায়ী, ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান খানের চেয়েও হিরো আলমকে বেশিবার খোঁজা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে দেশজুড়ে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়।