ঢাকা অফিস : গ্রিনলাইনের একটি বাস চাপায় পা হারানো রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ কেনো বাস্তবায়ন করা হলো না, দুপুর দুইটার মধ্যে তার কারণ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষকে। না হলে গ্রিনলাইনের সব বাস জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
গ্রিনলাইনের একটি বাসের চাপায় এক পা হারানো রাসেল এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি জানালে আজ বৃহস্পতিবার, বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আজ, পঙ্গু রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ বাস্তবায়ন সম্পর্কে আদলতে প্রতিবেদন দেয়ার দিন ঠিক ছিল। তাই সকালে বিষয়টি আদালতে উঠলে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘গ্রিনলাইন পরিবহণ কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। এমনকি কোনো প্রকার সাড়াও দেয়নি। তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন।’
এ সময় আদালত গ্রিনলাইন পরিবহণের আইনজীবী অজিউল্লাহকে ডেকে তার কাছে বিষয়টি জানতে চান। আইনজীবী অজিউল্লাহ তখন আদালতকে বলেন, ‘গ্রিনলাইনের মালিক দেশের বাইরে যে কারণে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আদালত এ সময়, আইনজীবীকে বলেন, ‘মালিক কোন দেশে আছেন এবং কবে ফিরবেন তা নিশ্চিত করেন।’ আইনজীবী বলেন, ‘তিনি জেনে জানাবেন।’
আদালত আইনজীবীর উদ্দ্যেশে বলেন, ‘(উনি) গ্রিনলাইনের মালিক দেশের বাইরে থাকলেও ওনার ব্যবসা বন্ধ হয়নি। তাঁর ম্যানেজারকে ডাকবেন। না হলে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা করব। ইতিবাচক পদক্ষেপ না থাকলে গ্রিনলাইনের সব গাড়ি জব্দ করা হবে। জব্দ করা গাড়ি নিলামে তুলে বিক্রির ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করবেন।’
গেল ১২ই মার্চ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৫০ লাখ ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।পাশাপাশি রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং কাটাপড়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়।
এর আগে, রাসেলের পা হারানোর পর ২০১৮ সালের ১৪ই মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী উম্মে কুলসুম হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানিতে ৬ই মার্চ রাসেলের পক্ষে আদালতকে জানানো হয়, ‘পা হারানোর পর এখন পর্যন্ত গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ তাঁর কোনও খবর নেয়নি এমনকি চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি।’
ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাসেলকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, এপিআর এনার্জি লিমিটেডের মাইক্রোবাস চালাতেন রাসেল সরকার। ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহণের বাসচালক কবির পেছন থেকে কবিরের মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাস থেকে নেমে বাসের সামনে গিয়ে বাসচালক কবিরের কাছে ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে চান। এর জেরে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে কবির ইচ্ছা করেই রাসেলের পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। সেখান থেকে রাসেল দ্রুত সরার চেষ্টা করলেও এক পা বাঁচাতে পারেননি রাসেল।