মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হবে আজ

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-০৯ - ১০:১০

গতকাল সোমবার নুসরাত জাহান রাফিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার সর্বশেষ অবস্থার কাগজপত্র পাঠানো হয়।

আজ সোমবার বিকেলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান। তাকে লাইফ সাপোর্টে দেখার পর বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে তিনি কথা বলেন।

এ সময় সামান্ত লাল সেন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে যাতে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় সে বিষয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটু আগে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবরও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তাকে যদি সিঙ্গাপুরে পাঠানোর মতো হয়, তাহলে যেন দ্রুত পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, সেই মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসার কাগজপত্র সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। তারা পাঠাতে বললে দ্রুত পাঠিয়ে দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত এত বেশি শতাংশ দগ্ধ রোগী সিঙ্গাপুরের কোনো হাসপাতাল নিতে চায় না। তারপরও আমরা সিঙ্গাপুরে কথা বলছি। আমরা চেষ্টা করছি।’

এ সময় বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে। তাই আমি এখানে তাকে দেখতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তার চিকিৎসার সকল খরচ সরকার বহন করবে।’

এদিকে দুজনের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন জীবনশঙ্কায় থাকা নুসরাত। তিনি জানিয়েছেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে রাজী না হওয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় চারজন। নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা হামলাকারীদের একজনের নাম শম্পা। তবে এখনো নুসরাতের দেয়া বক্তব্য পুলিশের কাছে পৌঁছেনি বলে জানিয়েছে ফেনীর পুলিশ সুপার।

এর আগে, ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে, নোয়াখালীর সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

মামলায় মুখোশধারী চারজন এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা করার পর, মামমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করার পর যে চারজন বিভিন্ন সময় মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে আসছে তাদের নামও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।’

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘অজ্ঞাতপরিচয় চার আসামি ও তাদের সহযোগিরা হত্যার উদ্দেশ্যে নুসরাতের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছে। মামলায় মুখোশধারী চারজন ও তাদের সহযোগিদের আসামি করা হয়েছে।’

মামলার বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ‘নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা তাঁর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ব্যস্ত থাকায় এজাহারটি নিয়ে আসার জন্য আমরা এক অফিসারকে ঢাকায় পাঠিয়েছি।’

নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে আটক করার খবর নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার। তারা হলেন, মোস্তফা কামাল, নুরুল আমিন, আশরাফ, সাইফুল, আরিফ, জসীম ও আলাউদ্দিন। আটক হওয়া ব্যক্তিরা এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

এদিকে, আইসিইউ থেকে গতকাল সকালে নুসরাতকে লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়। পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে তাকে সিঙ্গাপুর নেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। গত শনিবার পরীক্ষার হলে পেট্রোলের আগুনে নুসরাতের শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।