রানাপ্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই স্বনির্ভর

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-২৩ - ১০:৫৭

ঢাকা অফিস : রানাপ্লাজা ভবন ধসের দুঃসহ স্মৃতিকে পাশ কাটিয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক। তাদের কেউ এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী, আবার কেউ আছেন অন্য পেশায়। তবে এখনও অনেক শ্রমিক পুরোপুরি সুস্থ্য হননি। কিন্তু দেশি-বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ব্যয় বহন করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

দু’মাস হলো রোজিনা আক্তার জন্ম দিয়েছেন নতুন প্রাণের। অথচ ৬ বছর আগে ধ্বংস্তস্তুপে চাপা পড়া রোজিনা আক্তারের নিজের জীবন নিয়েই সংশয় ছিলো। শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচেছেন। শরীর আর মনের ক্ষত মেনে নিয়েই ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন।

রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আমার পা এখনও অচল। চলাফেরা করা কষ্টকর। পরে সিআরপি থেকে বললো, তুমি প্রশিক্ষণ নাও, আমরা কিছু টাকা দিব, তুমি মুদির দোকান করে নিও। আমার আশা ব্যবসা যেহেতু করছি, এটি যেন আরও বড় করতে পারি।’

মৃত্যুকে ফিরিয়ে দিয়ে, নতুন করে জীবন শুরু করাদের তালিকায় আছেন সুজন মিয়া। ক্ষতিগ্রস্ত পা নিয়েই উপার্জন করছেন। অটোরিকশা আর মুদি দোকানে ভর করে স্বনির্ভর হবার চেষ্টা করছেন।

সুজন মিয়া, ‘সিআরপি থেকে ফিজিও থেরাপি নেয়ার পরে, আমার হাতটা যখন মোটামোটি ভালো হলো তার পর আমি একটি মুদির দোকান দেই। আর গত দুই মাস ধরে এই অটোরিকশা চালাচ্ছি।’

রোজিনা আক্তার কিংবা সুজন মিয়া-দুজনই এখন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উদ্যোক্তা। এমন ঘুড়ে দাঁড়ানোর সত্যি গল্প আছে আরও অনেকের।

সিআরপি নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ সফিক-উল ইসলাম বলেন, ‘সেই ঘটনার পর কেউ বললো আমি গাভী পালন করবো। কেউ আবার বললো আমাকে ফটোকপি মেশিন দেন, আমি ব্যবসা করবো। এই রকম বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেই।’

তবে রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় আহতদের সবার গল্প এমন নয়। কেউ কেউ এখনও শরীর জুড়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন অসহ্য ব্যাথা, মস্তিস্কে চিরস্থায়ী হয়ে আছে ভবন ধসের আতঙ্ক।

একজন বলেন, ‘যেকোনও বিল্ডিং-এর সামনে গেলেই আমার ভয় লাগে। আমি তাকাই না। মনে হয় এখনই ভেঙে পরবে মানুষের ভরে।’

কিন্তু সাহায্য হিসেবে পাওয়া অর্থ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই প্রায় আয়বিহীন মানুষগুলোর চিকিৎসা নেয়াটাই এখন বিলাসিতা।

এক হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় রানা প্লাজা দূর্ঘটনা। আর যারা বেঁচে ফিরেছিলেন তাদের প্রত্যেকেই হারিয়েছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ। কেউ কেউ ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু বাকিদের প্রত্যেকেই প্রত্যেকটা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন জীবনের দৈর্ঘটাকে আরেকটু বড় করতে। আর তাই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এই ছয় বছর পরও সরকারি ও বেসরকারি সহায়তাটা অনেক বেশি প্রয়োজন।