তালা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর এলাকার একটি বিবাদমান সম্পত্তির দখল-পাল্টা দখলের আশংকায় মামলা, অপর পক্ষের দাবি তাদের পৈত্রিক ও খরিদা সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির জোরপূর্বক দখল বজায় রাখতে বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে হয়রাণি করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করা হচ্ছে।
উপজেলার জালালপুর গ্রামের বংশীবদন রায়ের ছেলে বলদেব রায় অভিযোগ করেন যে,একই এলাকার মৃত ফণি ভূষণ সিংহের ছেলে নারায়ন সিংহ,তার দু’ছেলে অশোক সিংহ ও দিপক সিংহ,স্ত্রী নমিতা সিংহ,মাগুরার মৃত কোমল কান্তি রাহার স্ত্রী মিনতি রাহা ও পাইকগাছার কাশিমনগর গ্রামের মৃত শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের স্ত্রী নমিতা বিশ্বাস ও তার ছেলে চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস সংঘবদ্ধভাবে তার দখলীয় জালালপুর মৌজার জেএল নং-৮৪ বর্তমান ৬১৯ খতিয়ানের ৬০৯,৬০৮,৭১২ দাগের ১.২৭ একর সম্পত্তি জবর দখলের হুমকি দিলে তিনি ২৮ মার্চ ১৯’ সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-৪২৩/১৯। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে তালা থানা অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। তার অভিযোগ,আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিবাদীরা ফের ৯ জুন (রবিবার) ভোর ৫ টার দিকে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উক্ত বিবাদমান সম্পত্তির দখল নিতে সেখানকার সুপারি গাছ ও বাঁশ কাটতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি ও তার লোকজন বাঁধা দিলে তারা তাদেরকে মারতে উদ্যত হয় ও বিভিন্ন হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে। এঘটনায় বলদেব রায় রবিবার তালা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে নারায়ন সিংহ’র ছেলে দীলিপ ও অশোক কুমার সিংহ ও মৃত শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন,বলদেব বিবাদমান সম্পত্তির কোন অংশের মালিক নয়,প্রকৃত পক্ষে জালালপুর মৌজার সিএস ২৫৮ খতিয়ানের ৩০৭ দাগে.২৯ শতক,৩৩৪ দাগে ৮০ শতক, ৩৬৩ দাগে ২৬ শতক ও ৩৭০ দাগে ৩৪ শতক মোট ৪টি দাগে ১.৬৯ একর সম্পত্তির মূল প্রজা ছিলেন,জালালপুরের রজনী কান্ত পরামানিক। তিনি জীবদ্দশায় ১৯৩৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী ৩৫৩ নং পাট্টা দলিল মূলে তার একমাত্র কন্যা বনচারী দাসীকে মালিকানা হস্তান্তর করেন। তার জীবদ্দশায় উক্ত সম্পত্তির ভোগ দখলে থাকাবস্থায় এস,এ ২৯২ নং খতিয়ানে উক্ত ১.৬৯ একর সম্পত্তি তার নামে যথাযথভাবে রেকর্ড সম্পন্ন হয়। এরপর বনচারী দাসী গত ৩/২/৭৫ সালে ৬২৮ নং দানপত্র দলিল মূলে ৩৩৪ দাগের সাড়ে ১৬ শতক জমি নারায়ন প্রসাদ সিংহকে হস্তান্তর করেন। এরপর বনচারী জনৈক গৌরদাসকে আরো ২৬ শতাংশ জমি হস্তান্তর করে বাকী ১.২৭ শতক জমিসহ এক মাত্র মেয়ে কুসুম বিশ্বাসকে রেখে মৃত্যু বরণ করেন। পরে কুসুমের ২ মেয়ে নমিতা বিশ্বাস ও মিনতি রাহা সমুদয় সম্পত্তির মালিকানা থাকাবস্থায় মিনতি রাহা অর্থের প্রয়োজনে গত ২৫/৬/১৮ সালে ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির সাড়ে ৬৩ শতাংশ সম্পত্তি ২২৩৭ নং কোবলা দলিল মূলে অশোক সিংহ ও দিলীপ কুমার ওরফে দীপক সিংহর নিকট মালিকানা হস্তান্তর করেন। একই দিন নমিতা তার প্রাপ্য বাকী ৩১ দশমিক ৩/৪ শতাংশ সম্পত্তি তারই সহোদর বোন নমিতাকে মালিকানা হস্তান্তর করেন। সর্বশেষ নমিতা তার ওয়ারেশ ও দানপত্র দলিল মূলে প্রাপ্ত সাড়ে ৬৩ শতাংশ জমির সমুদয় অংশ তার বড় ছেলে চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসকে ২৫/৬/১৮ তারিখে ২২৪৮ নং দলিলমূলে মালিকানা হস্তান্তর করেন। এরপর স্ব স্ব দলিল মালিকরা নিজ নিজ নামে রেকর্ড সংশোধন করে নিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ,এরপরও বলদেব রায় সমুদয় সম্পত্তির অবৈধ দখল বজায় রাখতে একের পর এক বিভিন্ন আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে হয়রাণি অব্যাহত রেখেছেন। তারা এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এব্যাপারে তালা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেল বলেন,উভয় পক্ষকে শান্তি শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।