ইমতিয়াজ উদ্দিন, কয়রাঃ কয়রা-কাশিরহাট সড়ক না পুকুর বোঝা দায়! গাড়ির বদলে এখানে নৌকা চালানো যাবে। ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশীর ভ্যান চালক মোঃ আবুল কাশেম। কয়রা সদর থেকে কাশির হাটখোলা খেয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়াতে পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের অবস্থা বর্তমানে এতটাই শোচনীয় রুপ নিয়েছে যে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে এটিকে দেখে মনে হয় সড়ক নয় এ যেন পুকুর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়রা উপজেলা সদর হতে বেদকাশী কাছারীবাড়ি হয়ে কাশির হাটখোলা খেয়াঘাট পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ রাস্তাটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। রাস্তাটির অর্ধশতাধিক জায়গার ছোট বড় গর্তগুলি গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও গর্তে বালি-কাদা জমে ভরাট হয়ে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে গর্ত ছিল। তাই মহাবিপাকে পড়েছেন যানবাহন চালকরা। বিশেষ করে বাহির থেকে আসা মাল বোঝাই গাড়িগুলোর জন্য সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই নরম বালি-কাদার গর্তে চাকা পড়ে গাড়ি আটকে পড়ছে। আবার কখনো উল্টে যাচ্ছে। পরে মালমাল আনলোড করে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গর্ত থেকে গাড়ি তুলতে হচ্ছে।
কয়রা সদরের দক্ষিণাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পাতাখালী এলাকার মানুষের কয়রা উপজেলা সদর ও খুলনা জেলা সদরে যাতায়াতসহ মালামাল আনা নেয়ার এটাই একমাত্র রাস্তা। দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশীর পুলিশ ক্যাম্প, ফরেস্ট অফিস, কাস্টমস অফিস, ওয়াপদা অফিস, যেখানে যাতায়াতের এটাই একমাত্র রাস্তা। প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা এ পথ দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনে এ পথ দিয়ে উপজেলা সদর তথা জেলা সদর খুলনায় যাতায়াত করে। গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি বিগত বর্ষাকাল শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেরামতের উদ্যোগ গ্রহন করলেও শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ না মেলায় মেরামত কাজে হাত দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে উত্তর ও দক্ষিন বেদকাশি ইউনিয়ন দু’টির ৫০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল দশায় উদ্বিগ্ন এলাকার জনসাধারন।
বেদকাশী বড়বাড়ি এলাকায় যেয়ে কথা হয় ভ্যানচালক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েকদিন আগে অসুস্থ এক নারীকে নিয়ে তিনি কয়রা হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। অসাবধানতাবশত হঠাৎ করে একটি গর্তে চাকা পড়ে গিয়ে ভ্যানটি উল্টে যায়। এতে ওই রোগী এবং তিনি উভয়েই আহত হয়েছেন। এলাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়সই ঘটে থাকে। তারা জানায়, আইলার পর সর্বশেষ ২০১৩ সালে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে দায়সারাভাবে কাজ করা, নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার ও থিকনেস কম দেওয়ায় দু’বছরের কম সময়ের মধ্যে রাস্তার কার্পেটিং নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।
কয়রা উপজেলার উত্তরবেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘদিনের ভাঙাচোরা রাস্তাটি গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তার গর্তগুলিতে কাঁদা পানিতে পরিপূর্ণ হয়েগেছে। উত্তর ও দক্ষিন বেদকেশি ইউনিয়নের মানুষদের উপজেলা সদরে পৌছতে চরম দূর্ভগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের দাবী জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম রাস্তাটির সংস্কার জরুরী উল্লেখ করে বলেন, ইতমধ্যে রাস্তার টেন্ডার এবং ওয়ার্ক অর্ডার সম্পুর্ণ হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি দ্রুত সংষ্কার কাজ শুরু করে জন দূর্ভগ লাঘবে উপরস্থ কর্মকর্তাদেরকেও অবহিত করেছেন বলে জানান।