টিনের পরিবর্তে দেয়া হয় ইটের ঘর!
সেলিম হায়দার, তালা : সাতক্ষীরার তালায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ‘জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর নির্মাণে সদর ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে ফের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারই নির্বাচনী প্রতিপক্ষসহ একটি সুযোগ সন্ধানী মহল,এমনটি দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন।
দাবি করা হয় যে, তিনি বিনামূল্যের এসব ঘর প্রদানে চরম অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ঘর প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এছাড়া লাখ টাকা বরাদ্দের এসব ঘরে তিনি ৫০ হাজার টাকার উপকরণ সরবরাহ করে সমুদয় টাকা লোপাট করেছেন। এসব অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন মহলটি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের মে মাসে প্রকল্পটি প্রস্তাবিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের মে মাসে অনুমোদন পায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সম্পন্ন হয় এর কাজ । প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭৫২টি ঘর। এর মধ্যে তালা সদর ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয়া হয় ২৫৮টি ঘর।
সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় তালা উপজেলাতে ৭৫২টি ঘর সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজীয়া আফরিনের যোগদানের আগেই প্রকল্পের অধীনে ঘর বরাদ্দের নামের তালিকা প্রনয়ন করা হয়। বরাদ্দকৃত এসকল ঘরের নির্মানকাজ ৩০ জুন ২০১৮ এর মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও তিনি ঐবছরের ১ জুলাই তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। অবশ্য তার যোগদানের আগেই আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সময়সীমা শেষ হলেও প্রকল্পটির কোন কাজই শুরু করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে তার যোগদানের কয়েকমাস পর বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন।
এসময় তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের স্বার্থে সাজিয়া আফরীনসহ খুলনা বিভাগ ব্যাপী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের টিনের বেড়া দেয়া ঘরের পরিবর্তে প্রত্যেককে সম্ভব হলে স্থায়ী ও সময়োপযোগী অধিক ব্যয়বহুল কংক্রিটের ঘর নির্মানের নির্দেশনা দেন বিভাগীয় কমিশনার। পরবর্তীতে আশ্রায়ন-২ প্রকল্প’র সফল বাস্তবায়নে খুলনা বিভাগ জনপ্রশাসন পদকেও ভুষিত হয়েছিল।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতেই তালিকা থেকে পাকা ঘর থাকা সামর্থবান ও একাধিক নাম থাকা ৮ জনকে বাদ দিয়ে তদস্থলে অন্যান্য দুস্থ্য ও অসহায় ৮ জনকে ঘরগুলি বরাদ্দ দেয়া হয়। যাদের মধ্যে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা জব্বার, শিল্পকলার অসহায় বাশিবাদক লিটন, মানসিক প্রতিবন্ধী হালিম, দিনমজুর নুরু, হাসমত ও এক বিধবা মহিলাসহ রয়েছেন আরো দু’ অসহায় ব্যক্তি। পরবর্তীতে উন্নতমানের ইট, বালু, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী এবং আবুল খায়ের কোম্পানী থেকে সরকার নির্ধারিত ৩৬ মি:মি: পুরুত্বের টিন দিয়ে অধিক ব্যায়বহুল হওয়া স্বত্ত্বেও সম্পুর্ন কংক্রিটের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয় তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের।
অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘ দিন পর কূচক্রী মহলটি সংঘবদ্ধ হয়ে ফের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে চেয়ারম্যান ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ঘর প্রতি ৫০ হাজার টাকার উপকরণ কম দিয়ে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা লুট করেছেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি ঘর প্রদানে কারো কাছ থেকে কোন প্রকার উৎকোচ তো দূরের কথা উপরন্তু টিনের পরিবর্তে ইটের দেওয়াল ও টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পকেট থেকে টাকা ব্যয় হয়েছে। এরপর প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে খুলনা বিভাগ জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত হয়। সরকারের সফলতাকে তৃণমূলে ব্যর্থতায় পর্যবশিত করতে মহলবিশেষ পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে বলে দাবি,স্থানীয় ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বিশ্বাসের। তিনি বলেন,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনের সুষ্ঠু তত্ত্ববধানে প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে তার প্রতিপক্ষ ও সরকার বিরোধী মহল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসন্ন ইউপি নির্বাচনের আগে তাকে সমাজ ও এলাকাবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে পরিকল্পিত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
তালিকাভূক্ত সুবিধাভোগী সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মৃত পীরবক্স ছেলে আমজাদ আলী মোড়ল,কবির মোড়লের স্ত্রী পারুল বেগম, হাসান শেখ’র স্ত্রী নারগিস বেগম,সুকুমারের স্ত্রী পারবর্তী মজুমদার, জানান, তাদের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা না নিয়েই চেয়ারম্যান তাদের তালিকাভূক্ত করেছেন।
৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মীর কল্লোল ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান,তাদের জানা মতে তাদের এলাকা থেকে সুবিধাভোগী কারো কাছ থেকে কেউ কোন প্রকার টাকা বা উৎকোচ নেয়নি। মূলত তার কর্তব্য-কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেন বলেন, প্রকল্পে কোনো প্রকার দূর্নীতি-অনিয়ম হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ফ্রি এসেছিল, তিনি ফ্রি দিয়েছেন। তিনি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। তাছাড়া প্রকল্পের সভাপতি পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কোথাও দূর্নীতি-অনিয়ম হলে তার জানার কথা। তিনি বলেন,উপজেলার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রকল্পের একজন সাধারন সদস্য মাত্র। এক্ষেত্রে তার দূর্নীতি বা কোন প্রকার অনিয়মের সুযোগ কোথায় বলে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিযোগকারীদের প্রতি।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এধরনের একটি অভিযোগ তার কাছে এসেছে। বিষয়টি অবশ্যই তদন্তপূর্বক প্রমানিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।