দাকোপ প্রতিনিধিঃ নদী বেষ্টিত খুলনা উপকুলিয় দাকোপ উপজেলা দূর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে বহুল পরিচিত। ১৯৮৮ সালের হারিকেন ঝড়ের পর, ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানা, ঘূর্ণীঝড় আইলার ক্ষত চিহ্ন আজো বয়ে বেড়াচ্ছে দাকোপবাসী। আইলার তান্ডবে দাকোপে ২৩ জন মানুষ মারা যায়। বিধ্বস্ত হয় ৩৩৪১৬ টি বসতবাড়ী ও ২৩৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৫৬৩ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১১৮ কিলোমিটার ওয়াপদা বেড়ীবাঁধ। ঝড়ের তান্ডবে এখানকার ২৯১৩২ পরিবারের ১০৩৭০০ মানুষ অবর্ণনীয় ক্ষতির শিকার হয়। সমগ্র উপজেলার মধ্যে বৃহৎ সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়ন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। এ দু’টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ দীর্ঘ ২১ মাস পানি বন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। আইলার তান্ডবে কালাবগী নলিয়ান গুনারী ও জালিয়া খালী এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে বেড়ীবাধের
উপর আশ্রয় গ্রহন করে। সেই থেকে তারা আজো আছে নদী তীরে বাঁধের উপর। এদিকে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মানে সরকার মেঘা প্রকল্প গ্রহন করে। দি ফাষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো নামক চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উপজেলার ৩১ ও ৩২ নং পোল্ডারে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ কিলোমিটার টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মানের এই কাজ পায়। ৩ বছর মেয়াদী ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২৬ জানুয়ারী ২০১৬, গত ২৫ জানুয়ারী ২০১৯ যার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এক দফা সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত এ সময়ের মধ্যে সুতারখালী এবং কামারখোলা ইউনিয়নের কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে টেকসই বাঁধের অভাবে জনগোষ্টির দূর্ভোগ যেমন কমেনি, তেমনি কাটিনি তাদের ভয় আতংক। এ দিকে আইলার পর ঘূর্ণীঝড় মহসিন, ফণী, বুলবুল সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন আম্পানের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই জনপদের মানুষ। আম্পানের তান্ডবে প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । এ ছাড়া ১০৫০০ ঘরবাড়ী সম্পূর্ন এবং ১২৬১৮ টি বাড়ীঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের মানুষ আজো আইলার ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। আইলায় ভিটে হারা কালাবগী নলিয়ান ও গুনারী এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ এখন মুল বাঁধের বাইরে নদী তীরে টোং ঘরে জীবনের ঝুঁকি বসবাস করছে। কালাবগী শিপসার তীরে এমনই দূর্বিষহ জীবন কাটানো পরিবার গুলোর নাম করন হয়েছে ঝুলন পাড়ার বাসিন্দা। ঝুলন পাড়ার জীবন চিত্রের প্রতিচ্ছবি এই ইব্রাহীম রতœা দম্পতি দীর্ঘ ১১ বছরে ফিরে পায়নি ভিটে মাটি ও বাস যোগ্য কোন ঠিকানা। শিক্ষা চিকিৎসা বা মৌলিক অধিকার কি জিনিস তারা আদৌ সেটা জানেনা। স্ত্রী ও ২ কন্যাকে নিয়ে কোন মতে বেঁচে থাকা ছিল ইব্রাহীমের স্বপ্ন। জীবিকার একমাত্র পথ চিংড়ী পোনা আহরনে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়, তাদের বেঁচে থাকার সেই স্বপ্নকেই যেন কেড়ে নেওয়া হল। তাদের মত টোং ঘরের এই ছিন্নমুল পরিবারের কয়েক হাজার মানুষের চোখে মুখে নিদারুন হতাশা । ধারাবাহিক দূর্যোগের আঘাতে জীবিকার পথ রুদ্ধ, দীর্ঘ ১১ বছরে কাটেনি ঝুলনপাড়ার বাসিন্দাদের দূর্ভোগ।
দীর্ঘ এই সময়ে টেকসই বেড়ীবাধ নির্মান কাজ যেমন শেষ হয়নি, তেমনি ধীর গতির এই নির্মান কাজ নিয়ে জনমনে আছে নানা প্রশ্ন। আছে বাধের সম্মুখ ভাগ থেকে মাটি কেটে নদীকে বাঁধের কাছে আনার অভিযোগ, আবার অতিমাত্রায় বালি ব্যবহারে নির্মিত বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে আছে সংশয়। দাকোপ বাসীর প্রানের দাবী ভাঙন রোধে চাই উপযুক্ত নদী শাসন ব্যবস্থা।