শরণখোলায় মাকে মেরে অনার্স পড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় মাদককারবারিরা

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-০৩ - ১৯:৩৯

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা : এ যেনো সিনেমার কাহিনী! ফিল্মি স্টাইলে গত সোমবার সন্ধ্যায় এক মাদক কারবারি তার ৭-৮জন সহযোগী মিলে ঘরে ঢুকে মাকে মারধর ও জিম্মি করে তুলে নিয়ে যায় তার অনার্স পড়ুয়া মেয়েকে (১৯)। ঘটনার ১৫ঘন্টা পর মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ওই কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে।
এঘটনায় বাড়াবাড়ি বা মামলা করলে সবাইকে কুপিয়ে মেরে ফেলা হবে। তুলে নেওয়ার সময় ওই বখাটেরা এমন হুমকি দিয়ে যায় মেরে মাকে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মঠেরপাড় গ্রামের ফারুক গাজীর মাদক কারবারি ছেলে সুজন গাজী (২৯) দলবল নিয়ে এ কান্ড ঘটিয়েছে।
ঘটনার পর সুজন ও তার সহযোগীদের অব্যাহত হুমকিতে প্রথমে মামলা করতে অনিহা প্রকাশ করে মেয়ের পরিবার। পুলিশ পরিবারকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় আজ বুধবার বিকেলে মেয়ের বাবা বাদি হয়ে তিন জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬জনের নামে অবশেষে মামলা দায়ের করেছেন।
মেয়ের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার জানান, প্রতিবেশী ফারুক গাজীর ছেলে সুজন তার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রস্তার দিয়ে আসছে। ছেলে মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে এ বিয়েতে তারা রাজি না। এতে তাদের ওপর সে ক্ষুব্ধ। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ছিল বাড়িতে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুজন তার ৭-৮জন সহযোগী নিয়ে তার বাড়িতে হানা দেয়। প্রথমে তার স্ত্রীকে মারধর করে। এপর ঘরের বেড়া ও মালামাল ভাঙচুর করে মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। তার মেয়ে শরণখোলা সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
মেয়ের মা ময়না বেগম বলেন, মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার সময় সুজন হুমকি দেয়, যদি মামলা করিস তাহলে তোদের কুপিয়ে মেরে ফেলবো। সেই ভয়ে আমরা পুলিশকেও বলিনি। সুজন বলে, আমার নামে মামলা করে কিরবি? আমার নামে থানায় এরকম বহু মামলা আছে। এতে পুলিশ আমার কিছুই করতে পারবে না।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে কলেজ ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান শুরু করে। অপহরণকারীরা পুলিশি অভিযানের খবর জানতে পেয়ে নিজেরা বাঁচতে মেয়েটিকে উপজেলার বানিয়াখালী এলাকায় ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
ওসি জানান, মেয়ের পরিবারকে বার বার বলার পরও বখাটেদের হুমকির ভয়ে মামলা করতে প্রথমে রাজি হয়নি। এনিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের। পরে পরিবারকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বুঝিয়ে সুজিয়ে মামলায় রাজি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে সুজনসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনের নামে মামলাটি দায়ের করেছেন। মাদক কারবারী সুজনের বিরুদ্ধে এর আগে শরণখোলা থানায় একাদিক মামলা রয়েছে। সুজনসহ আসামাীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
বখাটে সুজনের বাবা মো. ফারুক গাজী বলেন, ছেলের কর্মকান্ড ও আচরণে আমি অতিষ্ট। ওর কাছে আমি নিজেই নিরাপত্তাহীন। সুজন মাদকাশক্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েও একারণে পারিনি। আমি ছেলেকে আইনের আওতায় আনার জন্য সকল প্রকার সহযোগীতা করবো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সুজনের মামা মো. জাহাঙ্গীর তালুকদার বলেন, সুজনের বখাটেপনার কারণে আমি ওর পরিচয় দেই না। খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, ওই ছাত্রীর বাবার কাছ থেকে ঘটনা শুনে আমি তাকে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।