বিপ্লব দে,চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের চীফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. সামশুল আলম মো. ইমতিয়াজ বাবুলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট হাসপতালের সূত্র থেকে জানা যায় সিএমও দীর্ঘদিন যাবৎ হাসপাতালে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। ভূয়া বিল ভাউচার বানিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে আজ শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ইমতিয়াজ বাবুল।
সূত্র দাবী করেছে, সিএমও একাধিক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন একাধিক অভিযোগ খোদ রেলওয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের। কিন্তু! তার দুর্নীতি নিজেই ধামা চাপা দিয়ে দেন কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারনে? এছাড়া তিনি কালোবাজারে সরকারী ঔষধ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এ দুর্নীতিবাজ (সিএমও) ডাঃ ইমতিয়াজ বাবুলের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তারা কর্মচারী বলেন, হাটহাজারীতে তার নিজস্ব ক্লিনিক রয়েছে। তার ক্লিনিকেই রেলওয়ে হাসপাতালের সমস্ত ঔষুধ তিনি ঔখানে নিয়ে যান সরকারি এম্বুলেন্সে করে। তিনি নামে বেনামে টেন্ডার করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
বর্তমানে কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাবুল নিজেই পরিচালনা করছেন বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। রেলওয়ে হাসপাতালের লাখ লাখ টাকার টেন্ডার ঘাপলা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারের প্রায় লাখ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাবুল গোপনে ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেলওয়ে হাসপাতালের প্রতিটি টেন্ডারে তার পছন্দের টিকাদারদের টাকার বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুল রেলওয়ে হাসপাতাল থেকে ঔষধাগার থেকে ঔষধ তুলে কালো বাজারে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যা বর্তমানে এখনো অব্যাহত। এসব করে ইমতিয়াজ বাবুল এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। চাকুরী জীবনে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে অগাধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
রেলওয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির একের পর এক আলামত রীতিমত উদ্বেগজনক। যা সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানকে মারাত্বকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যেমন: রোগীদের বেড দুর্নীতি, টেন্ডার দুর্নীতি, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন ইকুইপমেন্টে দুর্নীতি, পিপিই নিয়ে দুর্নীতি, ও বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডা. সামশুল আলম মো. ইমতিয়াজ বাবুলের বিরুদ্ধে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ডাক্তার হলেও। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা তো দূরের কথা, উল্টো রেলওয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিনামূল্যের ওষুধ রোগীদের কিনতে হয় অতিরিক্ত মূল্যে। হাসপাতালে কম্বল, মশারি, চাদর ও বালিশের কভার দেয়ার নিয়ম থাকলেও সব রোগী সেগুলো পায় না। অন্যদিকে, অসাধু উপায়ে হাসপাতালের ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেই ঠিকাদারী করেন ইমতিয়াজ বাবুল।
হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রেলওয়ে হাসপাতালের বাবুল সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম শহরে বিশাল অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি। প্রকাশ্যে অনিয়ম করে হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের লাখ লাখ টাকার কাজ প্রতিবছর পাচ্ছেন তার পছন্দের ঠিকাদার। তার এসব দুর্নীতি তদন্ত করলেই বেরিয়ে পড়বে থলের বিড়াল।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের চীফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডাঃ ইমতিয়াজ বাবুল প্রতিবেদককে বলেন, আমি চট্টগ্রামের ছেলে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য এসমস্ত অভিযোগ করা হয়েছে, রেল কর্তৃপক্ষ দেখবে! দয়া করে আপনি নিউজ করবেন না, আমার চাকুরী জীবনে আর বেশি দিন নেই, আপনি মেডিকেলে আসেন চা খেয়ে যান, হাসপাতালে দুর্নীতির নিউজ করলে আমি বিপদে পড়ে যাব। আপনার মেডিকেলে কয় জন স্টাফ আছে জানতে চাইলে তিনি তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল জুড়ে কোন ডাঃ নার্স ডিউটি না করে ঘরে গুমাচ্ছে, এবং বেশির ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারীর টেবিল পাকা পাওয়া যায়। আর এ দিকে পূর্ব রেলের সাবেক চীফ কমান্ডার দুর্নীতিবাজ ইকবালের সাথেও তার সখ্যাতা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে সরকারিভাবে যে পরিমাণ ঔষধ সরবরাহ থাকার কথা সেই পরিমাণ ঔষধ নেই। যা আছে রোগীরা তাও পাচ্ছে না ঠিত মতো। শুধু ঔষধ নয়, পুরো হাসপাতালটি যেন একটি ময়লার স্তুপ। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসা সেবায় অবহেলারও অভিযোগ মিলছে বার বার। এ দিকে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে করে তার বিরুদ্ধে ঔষুধ পাচারের অভিযোগ রীতিমত সবাইকে অবাগ করেছে।
বলতে গেলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালটির সবকিছু নড়েবড়ে। হাসপাতাল আছে ডাক্তার নেই, ঔষধতো আকাশের চাঁদ। কর্মচারী খুঁজে পাওয়াও দু:স্কর। অথচ প্রতি বছর হাসপাতালের সার্বিক ব্যয়ভার বহনে সংস্থাটিকে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে সরকারের।
দুর্নীতির বিষয়ে জানতে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সরদার শাহাদাৎ আলীর মোঠো ফোনে একাদিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।