শেখ শাকিল হোসেন, সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূল। নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ৫০টির বেশি গ্রাম। বিধ্বস্ত হয় অর্ধ লক্ষাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা মৎস্য ও কৃষিসম্পদ। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বেড়িবাঁধ দিয়ে জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা ঠেকিয়ে রাখা এলাকাগুলো যে কী মাত্রায় অরক্ষিত অবস্থায় আছে। দু’দিন আগে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আঘাত হানার পরও বোঝা গেছে। বছর না ঘুরতেই ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। এতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বেশি। বহু পুকুর ভেসে মাছের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে।
জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধে বুধবার (২৬ মে) থেকে উত্তাল নদ-নদীর ঢেউ আচড়ে পড়ে এখন কঙ্কালসার বেড়িবাঁধ কোনো মতে টিকিয়ে রেখেছে উপকূলবাসী। বছরের পর বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়ে আসলেও সেই দাবি বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে।
শক্রবার (২৮ মে) সকাল ১০টায় উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালি পয়েন্টের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।
কর্মসূচিতে নেয়া উপকূলবাসী- ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই। একবারই মরবো, বারবার নয়। আমাদের জীবনের কি কোন মূল্য নেই? জলবায়ু তহবিল কাদের জন্য? উপকূলের কান্না কি চিরদিনের? কর্তৃপক্ষ মরে গেছে, আমরা বেঁচে করবো কি? নিরাপদে বাঁচার, নাই কি আমার অধিকার? বাস্তভিটা ছেড়ে, ভাসানচরে যাবো না- ইত্যাদি প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।
উপকূলের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটির আয়োজনে এই কর্মসূচিতে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে উপকূলের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটির সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহিন বিল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, মুহতারাম বিল্লাহ, মুতাসিম বিল্লাহ, হাসানুল বান্না প্রমুখ। প্রতীকী লাশ হয়ে প্রতিবাদ জানান মাসুম বিল্লাহ, ইয়াসির আরাফাত, সালাউদ্দিন, মাহি ও সালাউদ্দিন জাফরী।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৌশলী ইয়াছির আরাফাত বলেন, বিগত ১২ বছর ধরে উপকূলের মানুষ ভাসছে। প্রতিবারই এমন পরিস্থিতিতে কর্তাব্যক্তিরা শুধু আশ্বাসের কিছু মুখস্থ বুলি আওড়ান। আমরা নানান ধরনের মেগা প্রকল্পের নাম শুনে আসছি, কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর উদ্যোগ আলোর দেখা পায়নি। আমরা উপকূলের মানুষ টেকসই বেড়িবাঁধসহ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে অত্র অঞ্চল পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অত্র অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করার দাবি জানাই। ভুক্তভোগী স্থানীয় রবিউল ইসলাম জানান, আম্পানে ঘর বাড়ি সব ভেঙে গেছে। গত ৪ বছরে ৫ বার ঘর বানাতে হয়েছে। মাছের ঘের ডুবে গেলে সর্বশান্ত হয়ে যাই। একটু ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে আবার শুয়িয়ে দিলো আমাদের। আর যাবারও জায়গা নেই। বলারও জায়গা নেই।
উল্লেখ্য, উপকূলীয় এলাকার ৮ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপকূল এলাকার এসব বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল; কিন্তু তার বড় অংশ এখনো যথাযথভাবে মেরামত হয়নি। গোটা উপকূলীয় এলাকা এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।