খুলনা অফিসঃ খুলনার সময়ের খবর পত্রিকার সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানকে ফাঁসানোর চেষ্টাকারী আলোচিত সেই প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র আরও দুইজন সহযোগিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ১৪ ফেব্র“য়ারি (সোমবার) খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ এ আদেশ দিয়েছেন।
জেল হাজতে প্রেরণ হওয়া ওই দুই আসামি হলো ঢাকার মুগদা থানা এলাকার ১৬৯ দক্ষিণ মুগদা মান্ডার চাঁন মিয়া গলির বাসিন্দা শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীর ছেলে কাওছার আহমেদ চৌধুরী (৪৫) ও বংশাল থানাধিন ছিদ্দিবাজার জবেদ গলির দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলু মিয়ার ছেলে আশিকুর রহমান (৩৪)। এরা দু’জনই প্রতারক মনি’র সহযোগি হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় স্বাক্ষী ও নানা প্রতারণার সাথে জড়িত এ চক্রটি। এদের মধ্যে কাওছার আহমেদ প্রতারক মনি’র ঢাকার ভাড়া বাসার বাড়ির মালিক ও আশিক তার সহযোগি বলে জানা গেছে।
প্রতারক মনি’র বাদি হয়ে ঢাকার মুগদা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে খুলনার সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান ও আইনজীবী মেহেদী হাসানের নামে একটি ষড়যন্ত্রমুলক মামলা করেন। ওই মামলায় কাওছার আহমেদ চৌধুরী ও আশিকুর রহমানকে মিথ্যা স্বাক্ষী বানানো হয়। এছাড়া ৩শ’টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানকে ফাঁসানোর চেষ্টার মামলায়ও এরা দু’জন প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে বলে তথ্য মেলে। পরবর্তিতে দেখা গেছে মনি’র বিভিন্ন মামলায় এদেরকে স্বাক্ষী বানিয়ে নানাভাবে প্রতারনা ও ব্লাকমেইল করে এ চক্রটি। এবিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ ও জিডি এ প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে।
এরআগে গত ২৪ নভেম্বর রাতে প্রতারক চক্রের হোতা ফরিদা ইয়াসমিন মনিকে গ্রেফতার করে র্যাব-৬ সদস্যরা। ২৫নভেম্বর সদর থানা পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহীদুল ইসলাম আসামি মনিকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। ২মাস ৯দিন কারাবাসের পর গত ৮ফেব্রুয়ারি মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন হয়। প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধিন করিম নগর মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল ওহাব খাঁনের মেয়ে। সে বসুপাড়া কবরখানা এলাকার টাওয়ার ওয়ালা গলির শহিদুল ইসলামের বাড়ির ৫তলায় ভাড়া থাকেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানের নামে একটি ভুয়া অঙ্গিকার নামা তৈরি করে এ প্রতারক চক্রটি। ওই অঙ্গিকারনামায় বলা হয়, ফরিদা ইয়াসমিন মনি নামের এক নারীর সন্তান উদ্ধারের কথা বলে সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান ৩লাখ ৭৭হাজার টাকা নিয়েছেন। এ অঙ্গিকারনামাটি ব্যবহার করে ওই চক্রটি সোহাগ দেওয়ানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নানা দপ্তরে অভিযোগ, মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করে। এরপর প্রাথমিকভাবে প্রমান মেলে তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তৈরি করা অঙ্গিকারনামাটি ২০১৮ সালের ৪জানুয়ারির তারিখে দেখানো হলেও সেটি আসলে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বিক্রি হয়েছে। সহকারি নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) প্রধান কার্যালয় ও পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের ট্রেজারী শাখার লিখিত তথ্যমতে এ প্রাথমিক সত্যতা বেড়িয়ে আসে। এঘটনায় গত ১৫ নভেম্বর খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করতে কেএমপি’র সদর থানাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ হাতে পেয়ে খুলনা সদর থানায় প্রতারক চক্রের প্রধান ফরিদা ইয়াসমিন মনিসহ ৫জনের নাম উলেখ ও অজ্ঞাত ৩/৪জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়। দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৩৮৫, ১০৯ ও ৫০৬ ধারায় গত ১৯ নভেম্বর মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ (নং-৩৪)।