ইউনিক প্রতিবেদক:
দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থীরা। ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে তারা। নানা অজুহাতে বিবাদ সৃষ্টি করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। ফলে তিল তিল করে অর্জন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধুলোয় মিশে যেতে বসেছে। এরা মানছে কাউকেই। এদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বহিরাগত আর পাশ করে বেরিয়ে যাওয়া ছাত্ররা। এদের মধ্যে শিবিরের ছেলেরা ঢুকে পড়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে খুলনার স্থানীয় মানুষের সাথে বিবাদে জড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি লায়ন্স স্কুলের সামনে, রায়ের মহলে, খালিশপুরে, শীববাড়ী মোড়ে, সোনাডাঙ্গায় রেস্টুরেন্টের খাবারের বিল দেয়া না দেয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা পরবর্তীতে অবস্থান নিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিককে মারধর, ভাংচুর করে নগদ অর্থ দাবি করে তারা। এভাবে রেস্টুরেন্টে খেয়ে দাম না দেয়ার উদ্দেশ্যে খাবারে ময়লা ফেলে অথবা নানা অজুহাতে বিভিন্ন স্থানে বিবাদ সৃষ্টি করছে ওই সকল ছাত্র নামধারীরা। অনেকটা পা পাড়িয়ে ঝগড়া করার মত এ সব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। তাদের টাকার প্রয়োজন হলেই এধরনের ঘটনা ঘটিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ওই সকল ছাত্র নামধারীরা। আর বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং খুলনার সাধারণ মানুষ। তারা না শোনে পুলিশের কথা, না শোনে রাজনীতিবিদদের কথা অথবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কথা। অসহায় ভিসিসহ পুরো খুলনার মানুষ। এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ সহ প্রশাসন যন্ত্র। অপ্রতিরোধ্য তারা। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় ঘুরতে শুরু করেছে খুলনার সাধারণ মানুষ। তারা বলছে পিট ঠেকে গেছে দেয়ালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভাড়া না দেয়ার জোট বাঁধছে খুলনার সকল বাড়ির মালিকেরা। এমনই হামলার ঘটনা ঘটেছে নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকায়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে।
ক্যাম্পাস পেরিয়ে আবাসিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও হামলায় আতংকিত শিশু নারীসহ এলাকাবাসী। নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ছাত্রদের।
সূত্র জানায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী মাষ্টার্স প্রথমবর্ষের ছাত্র মোঃ রায়হান হোসনকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে পশ্চিম বানিয়াখামারের একটি বাড়ি অবরোধ করে রাখে ছাত্ররা। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত তারা এ বাড়িটি অবরোধ করে রাখে। এ সময় বাড়িতে হামলা চালিয়ে গেট ভাংচুর ও গেটের সামনে অগ্নিসংযোগ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ ভয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রায়হান বলেন, বিগত আট মাস যাবত তিনি নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ নামে বাড়িতে বসবাস করেন। বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের সাথে খারাপ আচারণ করেন। শুক্রবার রাত আটটার দিকে বাড়ির একটি মিটার নষ্ট হওয়ার ঘটনায় তার সাথে মালিক লেলিন খারাপ আচারণ করেন। বিষয়টি রাত আড়াইটার দিকে রায়হান বন্ধুদের জানায়। শনিবার সকালে বাড়ির মালিক ভাড়াটে রায়হানের সাথে পুনরায় খারাপ আচারণ করেন। তাকে লাথি ও মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন। এরপর বিকেলে ছাত্ররা বিষয়টি জেনে বাড়ি অবরোধ করে ও বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।
এদিকে বাড়ির মালিক আনিসুজ্জামান বলেন, ভাড়াটিয়া রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। সে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়। তার মা আমার কাছে রেখে বাড়ি ভাড়া দিতে বলেন। সেই মোতাবেক আমি সহানুভুতির সাথে তাকে বাড়িটি ভাড়া দেই। কিন্তু রায়হান বিড়াল পোষে বাড়িটি নোংরা করে ফেলে। তাকে বারবার বলার পরও সে পরিষ্কার করেনা। এই বিষয়ে বলার কারণে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং আমি একটু কটুকথা তাকে বলি। কিন্তু তাকে মারধর বা লাথি মারার মতো কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। কিন্তু সে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত এবং পাশ করে যাওয়া ছাত্রদেরকে নিয়ে এসে আমার বাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমার বাচ্চারা সহ ভাড়াটিয়ারা এবং এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়েছে। এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ খুলনা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি বলেন, প্রতি নিয়তই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে অর্থ আদায় সহ নানা ধরনের হামলার সৃষ্টি করছে। এদের থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম রক্ষা করা যেমন জরুরি তেমনি খুলনার মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনার মানুষের সাথে সৌহর্দপূর্ণ সহাবস্থান অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
অপরদিকে ঘটনাটি জেনে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক ও পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। রাত ১০ টার দিকে ছাত্ররা টায়ার জ্বলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে শ্লোগান দিতে থাকে।
ছাত্রদের দাবি, যে ছাত্রকে বাড়ির মালিক লাঞ্চিত করেছেন, তার কাছে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ১ লাখ টাকা দিতে হবে। নাহলে বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হবে।
পরে শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে রাত পৌনে ১২ টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা অবরোধস্থল ত্যাগ করে।
তবে এসব মেনে নেওয়া যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্রকে বাসা ভাড়া দেয়া হবেনা। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষা সহ খুলনার মানুষের সাথে সৌহর্দপূর্ণ সহাবস্থান সৃষ্টি করার দাবি তাদের।