আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা অজ্ঞাত পরিচয় একদল মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে প্রায় ৮০ শতাংশ নমুনাতে প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্রাংশ বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন যা ইতিহানে প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে পাওয়া গেল পরিবেশ দুষণকারী প্লাস্টিকের উপস্থিতি।
মাইক্রোপ্লাস্টিক বলতে সাধারণত অতি-ক্ষুদ্র টুকরো, যার ব্যস এক ইঞ্চির পাঁচ ভাগের এক ভাগ বা ৫ মিলিমিটারের চেয়ে কম। মানবদেহে এমন প্লাস্টিকের উপস্থিতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। যদিও তারা এরইমধ্যে সারাবিশ্বে প্লাস্টিক দুষণ বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নেদারল্যান্ডসের এই গবেষণার ফলাফলকে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ভাবা হচ্ছে কারণ এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহের অভ্যন্তরে চলাচল করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও জায়গা করে নিতে পারে।
এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারন্যাশনাল জার্নালের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, ডাচ গবেষকরা ২২ জন অজ্ঞাত পরিচয় দাতার রক্ত পরীক্ষা করে ১৭ জনের রক্তেই মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে অর্ধেক নমুনায় পাওয়া গেছে পিইটি বা পলিথিলিন টেরেফথেলেট, যা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের পানীয়র বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ৩৬ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে পলিস্টেরিন, যা খাবার মোড়কীকরণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আর ২৩ শতাংশ নমুনায় শনাক্ত হয়েছে পলিথিলিনের উপস্থিতি। সাধারণত ফিল্ম, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরিতে পলিথিলিন ব্যবহৃত হয়।
নেদারল্যান্ডসে এ গবেষণার নমুনাগুলোয় প্রাপ্ত মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা হলো ১ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ, প্রতি মিলিলিটার রক্তে ১ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। প্লাস্টিকের এ পরিমাণ শুনতে কম মনে হলেও রক্তে এর উপস্থিতি উদ্বেগের দাবি রাখে।
আমস্টারডামের ফ্লাইয়া ইউনিভার্সিটির ইকোটক্সিকোলজির প্রফেসর ও গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক ডিক ফেঠাক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া খুবই যৌক্তিক। রক্তে এসব (প্লাস্টিক) পার্টিকেল রয়েছে এবং সেগুলো সারা শরীরে পরিবাহিত হচ্ছে। গবেষণাটিতে ‘যুগান্তকারী ফলাফল’ মিলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন নমুনার আকার ও পরীক্ষিত পলিমারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
গবেষকরা জানান, খাবার ও পানীয় থেকে প্লাস্টিক পার্টিকেল মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। একইভাবে বায়ুমণ্ডল থেকেও শরীরে প্লাস্টিকের প্রবেশ ঘটতে পারে। শরীরে প্লাস্টিকের উপস্থিতি নিয়মিত প্রদাহের কারণ হতে পারে।
শরীরে প্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ এড়াতে বাড়িঘর ও আশপাশের বায়ুপ্রবাহ ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দিয়ে প্রফেসর ডিক ফেঠাক বলেন, বাইরের চেয়ে ঘরের ভেতরেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব বেশি দেখা যায়। এজন্য আমিও খাবার ও পানীয় ঢেকে রাখি যাতে প্লাস্টিক-কণার উপস্থিতি কম থাকে।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, এর আগে মানুষের মস্তিষ্কে, নাড়িতে ও গর্ভস্থ শিশুর দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্তের কথা জানা গেল।