তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)// মাথার ওপর একটু ছাউনির স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন। কিন্তু স্বামী আবুল হোসেনের মৃত্যুর পর সে স্বপ্ন দেখাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। সন্তান -সংসার নেই। অন্যের ভাঙা ঘর কিংবা বারান্দায় রাত কাটাতেন। ঝড়-বৃষ্টি আর শীতে অমানবিক কষ্ট করেছেন। যখন জুটেছে তখন খেয়েছেন, নয়তো না খেয়েইে কাটিয়ে দিয়েছেন।
জামিরার বাড্ডাগাতী গ্রামের বৃদ্ধা আম্বিয়া বেগমের (৬২) দিন কেটেছে এভাবে। তবে তাঁর স্বপ্ন ভেঙে যায়নি। অবশেষে ফুলতলা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পেয়েছেন একটি আধুনিক ঘর। আম্বিয়া বেগম এখনো বিশ^াস করতে পারছেন না, তারঁ নিজের একটি ঠিকানা হয়েছে। ঘর পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন তিনি। এমন সময়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমিসহ একটি আধা-পাকা বাড়ি পেয়েছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে বেজায় খুশি বৃদ্ধা মরিয়ম।
এদিকে জামিরার ছাতিয়ানী গ্রামের মাফুজার স্বামী রেজোয়ান মোল্যা হার্ডের সমস্যায় ভুগছেন প্রায় ১২ বছর ধরে। তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া করানো এবং সংসার চালাতে গিয়ে সবসময় অভাব অনাটন লেগে থাকতো। ছিল না কোন জমি কিংবা থাকার জন্য ঘর। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো মতে পেটের ভাত জুটলেও রাতে ঘুমানোর জায়গা ছিল না। পরের জমিতে পলিথিন টাঙিয়ে দুঃখ-দুর্দশায় দিন কাটত মাফুজার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে এসে তাকে ঘর বুঝিয়ে দিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, এভাবে নিজের অনুভ‚তির কথা বলছিলেন ।
ফুলতলায় ঈদের ঠিক আগে জমিসহ বাড়ি পাওয়ায় ভ‚মিহীন ৪টি পরিবারের মুখে এখন রাজ্য জয়ের হাসি। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্সুয়ালি উদ্বোধনের পর এসব পরিবারের হাতে ঘরের মালিকানাসহ দলিল তুলে দেওয়া হয়। ফুলতলা উপজেলা হাবিবুর রহমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মোঃ আরিফুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী জাফর উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ হোসেন আশু, উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াছিন আরাফাত,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, আইসিটি কর্মকর্তা পুষ্পেন্দু দাস, সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহীন আলম, বীজ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান, প্রাথমকি শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাঃ আবুল কাশেম,খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ সমীর কুমার ব্রক্ষ্ম, আওয়ীলীগ নেতা মোঃ আসলাম খান ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম, শেখ আবুল বাশার, শরীফ মোহাম্মাদ ভু্শইয়া শিপলু, , প্রেসক্লাব সভাপতি তাপস কুমার বিশ্বাস, সাংবাদিক শেখ মরিরুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক মোঃ নেছার উদ্দিন, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি শামসুল আলম খোকন প্রমুখ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ হতে এ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ৪৬ ভ‚মিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। এবারের ঘর হস্তান্তর শেষে ৪জন ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই শতক জমির ওপর নির্মিত ঘরের মালিক হলেন। এই প্রকল্পে আরও ৭৭টি ঘর নির্মান চলমান রয়েছে। যা এই অর্থবছরেই ভুমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা হবে। ঘর পাওয়ার পর তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলবে। এতদিন যাদের জমি ও ঘর ছিল না, পথে পথে ঘুরছেন তারা এবার সরকারের বিনামূল্যের নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারবেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার। অসহায়দের উপহারের ঘর দিতে পেরে মানসিক তৃপ্তির কথা জানালেন।
ঘর পেয়ে মালা খাতুন বলেন, আমার স্বামী একজন নওমুসলিম। যে কারণে পরিবারের সকল কিছু থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। পান বরজে দিনমজুরের হিসিবে কাজ করে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলে। ‘অনেক দিন ধরে ঘর ছাড়া বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইউএনও স্যার ঘর বানায় দিয়েছে, এতে আমি অনেক খুশি। জীবনে শেষ সময়ে এসে শান্তি পেয়েছি।
উপহারের নতুন ঘর পেয়ে নিজের অভিব্যক্তি জানিয়ে জুয়েল (৫০) বলেন, আমি গরিব মানুষ। জীবনে ভাবিনি মরার আগে পাকা ঘরে থাকতে পারব। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। খাস জমিতে বসবাস করতাম। সেই জমিতে যাচাই-বাছাইয়ে উপহারের ঘরে আমার নাম আসে। উপজেলা প্রশাসন সবকিছুর দায়িত্ব নিয়ে আমার ঘর নির্মান করে দিয়েছে। জুয়েল আরও বলেন ‘এ বয়সে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দালান ঘরে বসবাস করতে পারবো, নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে।