রূপসা প্রতিনিধি : অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির হাত থেকে রূপসা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ রক্ষার্থে ওই কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১১ জানুয়ারী বেলা সাড়ে ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকবৃন্দ কলেজের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন, সাবেক ছাত্রনেতা নাজিম মোড়ল, জুয়েল সরদার, আহাদ আহসান বাবু, আবির হোসেন হৃদয়, শেখ মোঃ অনিক, মোঃ রকি শেখ, শাহিন শান্ত, মাসুম হোসেন, সাজ্জাদ, লামিয়া, তামান্না, সাদিয়া খানম, রাকিব, সাঞ্জু, মিরাজ, মলয় প্রমূখ। উল্লেখ্য, ওই কলেজের প্রভাষক সাহাদত হোসেন কয়েক মাস আগে অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের লাগামহীন দুর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের ফিরিস্তি উল্লেখ করে খুলনা জেরা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এতে উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি কলেজে যোগদান করেন বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিব। যোগদানের পর হতে তিনি কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ঠ করেন। নিজের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন। যোগদানের পর হতে তিনি কোন একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকেননি। বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনে করেন অনিহা প্রকাশ। যোগদানের পর হতে কলেজের বিভিন্ন খাত হতে অসৎ উপায়ে অর্থ আত্মসাথ করতে থাকেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে টাকা উত্তোলন করে ভাউচারে খরচ দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এ টাকার একটি অংশ কমিটির কাছ থেকে অধ্যক্ষ নিজে নিয়ে নেন। এইভাবে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানের বাজেট থেকে টাকা উত্তোলন করে একটি অংশ নিজের কাছে রাখেন। এছাড়া তার আমলে সরকারি বাজেটের টাকা উত্তোলন করে মালামাল ক্রয় না করে তার নামে ব্যক্তিগত একাউন্টে টাকা রেখে ইচ্ছামত ব্যক্তিগত কাজে খরচ করে থাকেন। ২৮/০৩/২০২১ তারিখে সরকারি বাজেটের ২,০৩,৩১০/- টাকা উত্তোলন করে ০১/০৪/২০২১ তারিখে রূপালী ব্যাংক লিঃ রাজাপুর শাখায় নিজের নামে হিসাব নং-১২৫৭৮ একাউন্ট খুলে সেখানে ১,৮৮,০০০/- টাকা জমা রাখেন এবং পরবর্তীতে ১০/০৬/২০২১ তারিখ ও ০৯/০১/২০২২ তারিখে সরকারি বাজেটের ৪,৪০,৭৮৫/- টাকা ৬২২, ২৭৮/- টাকা উত্তোলন করে এর মধ্য থেকে ৫,৫৬,৩৮০/- টাকা নিজের ঐ একাউন্টে জমা রাখেন। বিষয়টি শিক্ষক মহলে সকলে জানলেও অধ্যক্ষ এসিআর এর ভয় দেখানোর কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেনি। তার বিরুদ্ধে ১০/০৪/২০২২ তারিখে আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাউশি কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে উল্লেখিত একাউন্ট হতে সকল টাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে তিনি এ টাকা নিয়ে বিদেশ সফরে যান বলে বিশস্ত সূত্রে জানা যায়। এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন গত ০৫ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রভাষক মোঃ সাহাদত হোসেন সেখ কর্তৃক উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩০/০৬/২০২২ তারিখ তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), খুলনাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। সে প্রেক্ষিতে তিনি উল্লিখিত বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফরম, প্রশংসাপত্র, সার্টিফিকেট, বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ আদায় করেছেন এবং সরকারি অর্থ ব্যয়ের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এমতাবস্থায়, অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনখানা মহোদয়ের সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো। এব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হাবিব বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে আমার বিরুদ্ধে নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তিনি বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিকের অনুরোধ জানান।