সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা আদলতের গারদে অসুস্থ হয়ে পড়া সোলায়মান সরদার (৮২) নামে এক বৃদ্ধ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সোলায়মান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সনাতনকাটি গ্রামের বাসিন্দা। সোলায়মানের ছেলে সিরাজুল সরদার জানান, তাদের সঙ্গে একই গ্রামের এরফান সরদারের ছেলে রিয়াছাত আলী সরদারের জমি নিয়ে আশাশুনি সহকারী জজ আদালতে দু’টি ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা চলছে। রিয়াছাত আলী সরদারের ছেলে রিয়াদ হোসেন সরদার ২০২১ সালে প্রতাপনগর ফাজিল মাদরাসায় ১০ম শ্রেণিতে ও তার (সিরাজুল) মেয়ে শিল্পী খাতুন কুড়িকাহুনিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। মাদরাসায় যাতায়াতের পথে রিয়াদ ও শিল্পীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের ২৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে রিয়াদ গোপনে শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে এলে স্থানীয়রা তাকে ধরে অভিভাবকদের খবর দেন। একপর্যায়ে সবাই মিলে শিল্পী ও রিয়াদের বিয়ে দেন। রিয়াদ পাঁচদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকার পর বাড়িতে চলে যায়। পরে তাকে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতে পাঠিয়ে ছেলে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে রিয়াছাত আলী ওই বছরের ২ জুন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন তিনি সাতক্ষীরার আমলি আদালতে তাকে (সিরাজুল), তার ভাই কামরুল, বাবা সোলায়মান সরদার, ছেলে সুমন সরদারসহ ছয়জনের নামে সাতক্ষীরার ৮ নম্বর আমলি আদালতে মামলা (সিআর-১৫৪/২১) করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে রিয়াদকে অপহরণের অভিযোগ করা হয়। বিচারক অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। আশাশুনি থানা মামলাটি (জিআর ১৯১/২১) রেকর্ড করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল্লাহ মোল্ল্যা ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আশাশুনি সদরের চাপড়া ব্রিজের পাশ থেকে রিয়াদকে উদ্ধার করেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে রিয়াদকে ধরে নিয়ে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। বাড়ি থেকে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে মামলা দেওয়ার পর সে বাড়ি ফিরে আসে। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সব আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদী আদালতে নারাজির আবেদন দিলে বিচারক মামলাটির পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হক সব আসামির বিরুদ্ধে অবরোধ করে আটকে রাখার অভিযোগে ৩৪১/৩৪৩/৩৪ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত সম্প্রতি এজাহারভুক্ত ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সে অনুযায়ী বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে সিরাজুল, ভাই কামরুল ও বৃদ্ধ বাবা সোলায়মান সরদারকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অসুস্থ বাবাকে না ধরে তাদের দুই ভাইকে আটক করার জন্য বার বার আবেদন করলেও পুলিশ কথা শোনেনি। একপর্যায়ে তাদের তিনজনকে থানা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিতে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের গারদখানায় সোলায়মান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এসময় সেখানকার চিকিৎসক স্মৃতিভা দাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে রিয়াছাত আলী সরদার জানান, তার ছেলেকে ভুয়া বিয়ে দেখিয়ে এফিডেফিটের কাগজ দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। সোলায়মানের মৃত্যুর বিষয়টি তিনি জানেন না। সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক শেখ মাহমুদ জানান, গারদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় সোলায়মানকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. স্মৃতিভা দাস জানান, জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা মাত্রই তিনি মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।