তালা : প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দিয়ে আন্দ্রেয়া সাতক্ষীরা এসেছেন নয় বছরের ছোট্ট শিশু কাকুলি সরকারের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। এক মাস আগে ইতালি থেকে তিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা আসেন। উদ্দেশ্য, নয় বছরের ছোট্ট শিশু কাকুলির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া। মূলত এই উদ্দেশ্যেই এদেশে আসা তার।
কাকুলি সরকার সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিষখালি ইউনিয়নের হরিণখোলা গ্রামের গোবিন্দ সরকারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে কাকুলী বড়, ছোট বোনের বয়স চার বছর। কাকুলি বর্তমানে তাদের গ্রামের বেসরকারি সংস্থা ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত কমিউনিটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাকে সহায়তা করছেন আন্দ্রেয়া।
আন্দ্রেয়া দীর্ঘ এক মাস অবস্থান করছেন তালা ও সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী বিনেরপোতা এলাকায় বেসরকারি সংস্থা ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল কার্যালয়ে। তাকে দেখভালের দায়িত্বে আছেন সংস্থাটির ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের ম্যানেজার মাহমুদুর রহমান মামুন।
বেসরকারি সংস্থাটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মামুন জানান, সংস্থাটি থেকে ঝরে পড়া ও অনেক অসহায় শিশুদের লেখাপড়া চালানোর কর্মসূচি রয়েছে। সংস্থাটির মাধ্যমে কাকুলীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন আন্দ্রেয়া। গত তিন বছর ধরে তিনি খরচ বহন করছেন। তবে কখনো দেখা হয়নি। মূলত কাকুলির সঙ্গে দেখা করার জন্যই আন্দ্রেয়া এবার সাতক্ষীরায় আসেন। ইতোমধ্যে কয়েকবার দেখাও করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে আবার ইতালি ফিরে যাবেন আন্দ্রেয়া।
কাকুলির মা বিথিকা সরকার জানান, গত ৩ জানুয়ারি আন্দ্রেয়া তাদের বাড়িতে এসে কাকুলির সঙ্গে দেখা করেন। কাকুলিকে আদর করেন। পরে ১২ জানুয়ারি আবার আসেন। ওইদিন কাকুলিসহ অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান। সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিন আবারও এসে কাকুলিসহ গ্রামের শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কাকুলি এখন আন্দ্রেয়াকে বাবা ডাকে।
ইতালীয় যুবক আন্দ্রেয়া জানান, ‘আমি আমার ভেপসা বাইকে গত ২৪ ডিসেম্বর ভোমরা বন্দর দিয়ে সাতক্ষীরায় এসেছি। আমার ভ্রমণ করতে ভালো লাগে। সাতক্ষীরায় এসেছি মূলত কাকুলির সঙ্গে দেখা করতে। আমি তার লেখাপড়ার খরচ বহন করি। কাকুলি যতদিন লেখাপড়া করতে চায় আমি তাকে সহযোগিতা করব।’
এদিকে আন্দ্রেয়ার আমন্ত্রণে সাতক্ষীরায় এসেছেন তার বন্ধু রোমানিয়ার বাসিন্দা এলেনা এক্সিন্তে ও ইতালির বাইকার বন্ধু ইলারিও লাভাররা। তারা এখন একত্রে সাতক্ষীরায় অবস্থান করছেন ওই বেসরকারি সংস্থাটিতে।