খুলনা : প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আমিষ জাতীয় খাদ্যের দাম। এরই সাথে বাড়ছে পুষ্টি ঘাটতি। বাজারে যেয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের চোখ যেন কপালে ওঠে। হাহুতাশ শুরু হয় বাজারেই। এককেজির জায়গায় আধা কেজি কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। প্রতিদিন একই অবস্থার সৃষ্টি হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
শুক্রবার সকালে খুলনার বেশ কয়েককটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে অনেক পণ্যের দাম। বিশেষত, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের পর এবার যেন আগুন লেগেছে মাছের বাজারে। গত সপ্তাহ থেকেই অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। সেই উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের আড়তে। প্রকারভেদে চাষের মাছ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
ডিম-মাংসের পর মাছের দাম বৃদ্ধিতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। গল্লামারী বাজারের মুদি দোকানি আব্দুল আজিজ জাগো বলেন, আগে কম দামে ডিম-ব্রয়লার কিনতাম। গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে। এখন দেখি মাছের দামও বেড়েছে। আমরা খাবো কী? যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের বেঁচে থাকাই কঠিন। সাধ থাকলেও সন্তানের মুখে মাছ-মাংস দিতে পারছি না। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙ্গাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ১৭০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা। আমিষের চাহিদা পূরণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ব্রয়লার মুরগি ও পাঙ্গাস-তেলাপিয়া মাছের ওপর বেশি নির্ভরশিল। মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সীমিত আয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সন্ধ্যা বাজারে আসা রিকশাচালক মেহের আলী বলেন, শুক্রবার দিনটিও যে ভালো-মন্দ খাবো সে উপায় নেই। নিরামিষ খেতে খেতে জীবন ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। মাছ কিনতে যদি ৫০ টাকা বেশি লাগে, তাহলে অন্য সদাই না কিনে ঘরে ফিরতে হয়। একই বাজারের মাছ বিক্রেতা আবুল মিয়া বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, মাছের দামও বাড়ছে। মাছের ফিডের (খাবার) এখন খুব চড়া দাম। খামারিরা এজন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ বিক্রেতা জানান, তার দোকানে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। যা আগে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো। এছাড়া প্রতি কেজি ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি। এক কেজির বেশি ওজনের কয়েকটি তাজা ইলিশ, যা দেড় হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওই ধরনের মাছ সপ্তাহখানেক আগেও এক হাজার ২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
অন্যদিকে বাজারে দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, বোয়াল মাছের কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০-৪৫০ টাকার মধ্যে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি এখন ১৯০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, এ দাম গত সপ্তাহ থেকেই চড়া। দেশি মুরগির কেজি চাওয়া হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা। গরুর মাংসও কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে এখন ৬৫০-৬৮০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি হালি ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।