খুলনা : খুলনায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন নির্দেশনা। সপ্তাহে মাত্র দু’দিন অফিস সময় পার হওয়ার পর চিকিৎসকদের সাথে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ করার নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সদর হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চোখে পড়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্য¡। চিকিৎসকদের রুম থেকে রোগী বের হলে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এমনকি চিকিৎসকের পাশের চেয়ারে বসে আছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। আর চাকরির মূল কার্যক্রম হলো রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন পাঠিয়ে দিতে হয় ওষুধ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাছাড়া এসব ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সকলে কম বেশি উচ্চ শিক্ষিত যুবক। খুলনা সদর হাসপাতালের রোগী তাজুল উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকের রুম থেকে বের হতেই একজন ভদ্রলোক এসে আমার কাছে প্রেসক্রিপশনটি দেখতে চায়। আমি প্রেসক্রিপশনটি দিতেই তিনি ছবি তোলা শুরু করেন। এর পর দেখি অন্য আরো কয়েকজন যুবক এসে একই ভাবে ছবি তুলছে। আমি এর কারন জানতে চাইলে বলে চাচা এমনই প্রয়োজন ছিল তাই তুলছি। শুধু আমি একা না এভাবে যত রোগি বের হচ্ছে তারা একই কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, ভাই ছবি তুলছি যে আমাদের কোম্পানির ওষুধ চিকিৎসক লিখছে কি লিখছে না। মূলত আমরা প্রতিমাসে চিকিৎসকদের একটি সম্মানি দিয়ে থাকি এই চুক্তিতে যেন আমাদের ওষুধ রোগীদের লিখে। আবার এই ছবি তারিখ ও সময় অনুযায়ী প্রতিদিন আমরা আর এসএম স্যারের কাছে পাঠিয়ে দেই। এছাড়া এই চাকরির গ্যারান্টি এক মিনিটও নেই। প্রতি মাসে সেলস্ টার্গেট বাড়ছে, টার্গেট পূরণ না হলে স্যালারি আটকে দেয় অথবা কম সেলারি দেওয়াসহ বিভিন্ন চাপপ্রয়োগ করে কোম্পানির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। কোন ছুটি নেই বললেই চলে শুক্রবার বেশিরভাগ ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ থাকলেও আমাদের কাজ বন্ধ নেই। এমনকি ওষুধ লেখানোর জন্য ডাক্তারদের ব্যাক্তিগত কাজ করতে হয় এমনকি মোটরসাইকেলে লিফট দেওয়াসহ বাড়িতে বাজার দেওয়া,সকালে নাস্তা দেওয়া লাগে কি করব? এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, আমি এ বিষয়ে সবসময় চিকিৎসকদের সতর্ক করেছি যে আপনারা কোনো চিকিৎসক কখনো ওষুধ কোম্পানির লোকজনের সাথে নির্দিষ্ট দিন ও সময় ছাড়া সাক্ষাৎ করবেন না। ইতিমধ্যে আমি খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্দেশনা দিয়েছি যে সপ্তাহে দুদিন শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুর দু’টার পর ছাড়া যেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হাসপাতালে প্রবেশ না করে। পাশাপাশি আমি নিজে আনসার সদস্যদের সতর্ক করেছি।