আবু হোসাইন সুমন, মোংলা প্রতিনিধিঃ মোংলায় সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে আহরণ করা প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের জব্দকৃত কাঁকড়া মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করেছে বনবিভাগ। মঙ্গলবার পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশনে (মোংলা) এ নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট চক্র এ নিলাম প্রক্রিয়ায় নাম মাত্র অংশ নিয়ে রপ্তানীযোগ্য ২০৩০ কেজির কাঁকড়ার চালানটি ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। আর এতে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বনবিভাগ। সাদা মাছ পরিবহনের অনুমতি পাস নিয়ে কাঁকড়া বহনের অভিযোগে বনবিভাগ ও কোস্ট গার্ড ওই কাকড়ার ট্রলার দুটি আটক করে।
বনবিভাগ জানায়, সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে মোংলার পশুর নদীর জয়মনি ও চিলা এলাকায় পৃথক অভিযান চালায় বনবিভাগ ও কোস্ট গার্ডের টহল দল। অভিযানকারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারের লোকজন নদীতে ঝাপ দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ট্রলার দুটিতে তল্লাশী চালিয়ে একটি ট্রলারে থাকা ২ হাজার কেজি এবং অপরটিতে ৩০ কেজি কাঁকড়া পায় বনবিভাগ। অবৈধভাবে পরিবহনের অভিযোগে কাকড়াসহ ওই ট্রলার দুইটি আটক করা হয়। চাঁদপাই স্টেশনে কাঁকড়া বোঝাই ট্রলার দুটি আনার পর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নিলাম প্রক্রিয়ায় ২০ লাখ টাকার কাঁকড়া ভাগিয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে স্থানীয় সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র। শেষ পর্যন্ত সকাল ৯ টায় তড়িগড়ি করেই একটি ট্রলারে থাকা ২০৩০ কেজি কাকড়া নিলামে ওঠায় বনবিভাগ। জয়মনি ও বৈদ্যমারী এলাকার খালেক খান, ইব্রাহিম খান, শুকুর সরদার, ইউসুফ শেখ, মামুন হাওলাদার, মেহেদী জমাদ্দার ও মালেক ফরাজীসহ ১০/১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট চক্র সরাসরি ও নেপথ্যে থেকে নিলামে অংশ নেয়। রপ্তানীযোগ্য প্রতি কেজি এ কাঁকড়ার বাজারমূল্য ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ’ টাকা। কিন্তু নিলামে নেয়া প্রতি কেজি কাঁকড়ার (ভ্যাটসহ) মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৯০ টাকা ২৫ পয়সা। সেই হিসেবে ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের কাঁকড়া মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় নিলাম প্রক্রিয়ায় ভাগিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। সূত্র জানায়, আটক দুটি ট্রলারের মধ্যে একটি ট্রলারের সাদা মাছ পরিবহনের পাস মোংলা উপজেলার বাশতলা গ্রামের রেজাউল করিম এবং অপর ট্রলারটির দাকোপ উপজেলার পাসাখালী গ্রামের শেখ মোঃ আবজালের নামে। তবে ৩০ কেজি কাঁকড়াসহ আটক রেজাউল করিমের ট্রলারটি নাম মাত্র জরিমানা ও সমঝোতার অবৈধ লেনদেনে ছেড়ে দেয় বনবিভাগ। বনবিভাগের বিধি অনুযায়ী জরিমানা ফি (রাজস্ব) দিয়ে ট্রলার মালিক কিংবা পরিবহন অনুমতিকারী কাঁকড়াসহ ট্রলারটি ছাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ থাকলেও বনবিভাগ ও সিন্ডিকেট চক্রের অর্থ লোভের কারণে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বনবিভাগের কথিত ওই নিলামে অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি ট্রলার ও কাঁকড়ার মালিক পক্ষের কেউকে। ফলে ট্রলার ও কাঁকড়ার মালিক প্রায় ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আর বনবিভাগ নাম মাত্র রাজস্ব আদায় করলেও অসাধু বন কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট চক্র আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছে। নিলামের ক্ষেত্রে মাইকিংসহ বিভিন্ন প্রচারণার বিধি বিধান থাকলেও তাও করেনি বনবিভাগ। এ বিষয় বনবিভাগের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আজাদ কবির জানান, ট্রলারসহ জব্দ কাঁকড়ার নিলাম প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে সম্পুর্ণ হয়েছে। প্রকাশ্য এ নিলামে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অংশ গ্রহণ করেছে বলে দাবী তিনি দাবী করেছেন। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মালেক ফরাজি সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় তাকে ২ হাজার কেজি কাঁকড়া বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো: মাহমুদুল হাসান বলেন, ওই নিলাম প্রক্রিয়ায় চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেদীজ্জামানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন তাই সবকিছু স্বচ্ছতার সাথেই হয়েছে। আর নিলাম প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। অপর একটি সূত্র জানায়, প্রায় ৩ হাজার কেজি কাঁকড়া অনুমান নির্ভর করে ২ হাজার কেজি দেখিয়ে নিলামে ওঠানো হয়। আর এ ক্ষেত্রে বনবিভাগের সঙ্গে সিন্ডিকেট চক্রের আগে ভাগেই গোপন সমঝোতা হয়।