বিশেষ প্রতিবেদক: আজ ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০২৪ সাল। নতুন বর্ষ। কিন্তু বর্ষবরনের নামে ফানুস ওড়ানো, পটকা ও আতশবাজি ফোটানোর কারনে হয়রানির শিকার হয় সাধারন মানুষ। বিকট শব্দে ভীতিগ্রস্থ হয়ে পালাতে যেয়ে প্রান হারিয়েছে কুকুর-বিড়াল।
ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ফানুস ওড়ানো, পটকা ও আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আতশবাজি, ফানুস উড়ানোসহ পটকা ফোটানো হয়। রাতভর বিকট শব্দে মাইক বাজিয়ে গান শোনার কোন বিরতি ছিলো না। নতুন বছর বরণের এসব আয়োজনে মুষ্টিমেয় কিছু লোক আনন্দ-উৎসব করলেও বিকট আওয়াজে দুর্ভোগে পড়েন শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা। এমনকি বিকট শব্দের আওয়াজে অসহায় প্রানী কুকুর-বিড়ালরা রাস্তায় ছোটাছুটির সময় দূর্ঘটনার শিকার হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে ১১টা ৫০ মিনিট থেকেই বিভিন্ন এলাকায়, অলিগলিতে পটকা ও আতশবাজি ফোটাতে থাকেন অনেকে। এ পটকা ফুটানোর ঘটনা ঘটতে থাকে ঘন্টাব্যাপী। কয়েকটি এলাকার বাসা বাড়ির ছাদে, সড়কে ও ফাঁকা জায়গা থেকে ফানুস ওড়াতে দেখা যায়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আতজবাজি ও পটকা ফোটালেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি পুলিশকে। কয়েক বছর ধরেই ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনের রাতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে আতশবাজি না করতে ও ফানুস না ওড়াতে নির্দেশনা দিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফানুসে। এজন্য এবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু রাত ১২টা বাজার আগেই আতশবাজির বর্ণিল আলোতে আলোকিত ছিল খুলনার আকাশ। তবে মুহুর্মুহু কান ফাটানো শব্দে বিরক্ত হয়েছে মানুষ। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁদের বিরক্তির কথা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও উচ্চ শব্দে গান বাজানো তো ছিলোই প্রায়ই জায়গায়।
খুলনার বাবু খান রোডের একজন বাসিন্দা বলেন, কেএমপি এতো জোড়ালো নিষেধাজ্ঞা দিলেও কিছু মানুষ কোন কিছু তোয়াক্কা না ফানুস ওড়ানো, পটকা ও আতশবাজি ফুটিয়েছে। সীমিত এই আনন্দে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারন মানুষেরা। সোনাডাঙ্গায় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে দুর্ঘটনার শিকার হন শরীফ নাম করে একজন মোটর বাইক আরোহী। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বিকট আওয়াজে কয়েকটি কুকুর ভীতিগ্রস্থ হয়ে দৌড়াচ্ছিলো। এ সময় একটি কুকুর মোটর বাইকের সামনে চলে আসে। তাকে রক্ষা করতে যেয়ে বাইক স্লিপ করে।
নাগরিক নেতারা বলেন, বর্ষবরন উদযাপনের নামে এরকম আতশবাজি ফুটানো, ফানুস উড়ানো, বাজি ফুটানো ও উচ্চ শব্দে গান বাজনা করা আমাদের মোটেই উচিত নয়। এ বিষয়ে প্রশাসণের নিষেধাজ্ঞা ছিলো। গুটি কয়েক লোকের জন্য বিশৃঙ্খলা এবং বিকট আওয়াজে হয়রানি হয়েছে সাধারন মানুষেরা। শুধু মানুষ নয়, কুকুর-বিড়ালরা ভয়ে ছোটাছুটি করার সময় হারিয়েছে জীবন। ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন। ফানুসসহ এ ধরনের আতশবাজির কারনে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আগুন লাগতে পারে। বাচ্চাদের চোখ,নাক ওকানের ক্ষতি হতে পারে। দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে এমন আয়োজন কমবে বলে তারা মনে করেন। তবে, অরাজকতা রোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে খুলনা নগরীর বানরগাতি এলাকায় মোহাম্মাদ তামিম (১১) নামে একটি বাচ্চার আতশবাজির আগুনে চোখ ঝলসে যায়।