ইউনিক ডেস্ক : খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাস ফের খুলনায় আসার চেষ্টা করছেন। এমন সংবাদে ফুঁসে উঠেছেন খুলনার সচেতন নাগরিক সমাজ, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেষার মানুষ। তাপসী দাস এখন ফরিদপুর জোনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তিনি খুলনায় থাকা কালে বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। খুলনাায় আবারও ফিরে এলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এমন অভিযোগ নাগরিক নেতাদের। তাপসীদাস খুলনায় কর্মরত থাকা কালে অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে তদন্তে মাঠে নামে সড়ক বিভাগ। তার বিরুদ্ধে গঠন হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটিতে ছিলেন সড়ক বিভাগ কুষ্টিয়া সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: মাসুদ করিম, সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিনসহ তিন কর্মকর্তা। এর পূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন। এছাড়া স্থানীয় ঠিকাদারগণ ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগও করেন।
এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে মন্ত্রণালয় থেকে আরও একটি টিম গঠন হয়। তদন্ত টিমে আহবায়ক হিসেবে ছিলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো: আনিসুল হক, উপ-সচিব মো: শামীমুজ্জামান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হামিদুর রহমান।
গত ৬/৭/২২ তারিখ খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খুলনা সার্কেল মো: মনিরুজ্জামানকে দুদকের উপ-পরিচালক কার্যলয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে তাপসী দাসের যাবতীয় দুর্নীতির খতিয়ান জমা দিতে বলা হয়। তাপসী দাস তখন গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এর আগে দুদক তাপসী দাসের সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখেন। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইল ও গোপালগঞ্জ দায়িত্ব পালন কালে ২০/৬/২০১৭ তারিখ দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ২৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন করাসহ তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। বিষয়টি নিয়ে প্রধান কার্যালয় দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা এর সহকারী পরিচালক (অনু ও তদন্ত-১) মো: ফারুখ আহমেদ গত ৫/২/২০১৮ তারিখ রমনা মডেল থানা ডিএমপি ঢাকা বরাবর এজাহারের জন্য আবেদন করেন। বিভিন্ন কৌশলে তাপসী দাস এসময়ে পার পেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হলে রমনা মডেল থানায় মামলা হয় যার নম্বর জি, আর ১১/১৮, তারিখ ০৫/০২/২০১৮ ইং। এ ছাড়া একই সময়ে রমনা মডেল থানায় আরও একটি মামলা রেকর্ড হয় যার নম্বর ১০৮। খুলনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ১০ কাঠা জায়গার উপর প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ক্রয় করেছেন আরও ২-৩টি বাড়ি ও একাধিক প্লট।
খুলনা,সাতক্ষীরা-চুকনগর সড়কে প্রথম কিলোমিটার মিনা বাজার হতে ময়লাপোতা পর্যন্ত কোন টেন্ডার বরাদ্দ ছাড়াই রাতের আঁধারে বিটোমিনাস অভারলে কাজ করা হয়। রানা বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের রিজিট পেভমেন্ট করায় রাস্তার কাজ শেষ না হতেই উপরের অংশ উঠে যায়। রড দিয়ে ঢালাই না করে শুধুমাত্র ঢালাই দেয়ায় রাস্তা অবস্থা এখনও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তদন্ত টিম গঠন হয়।
খুলনার নাগররিক নেতা এ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাস এমন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে তাকে আর খুলনায় না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।