আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদ্যুৎ ক্রয়ের মূল্য নিয়ে উদ্বেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ভারতের আদানি পাওয়ারের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি বহাল রাখতে পারে বাংলাদেশ। বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ ও সম্ভাব্য আইনি চ্যালেঞ্জের মাঝেই চুক্তিটি বহালের সম্ভাবনার এই তথ্য জানিয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে অবগত দুটি সূত্র। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সরকার দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করে বিভিন্ন চুক্তি করেছে কি না, বিশেষ করে এসব প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব আছে কি না, তা জানতে বিশেষ আইনের অধীনে একটি প্যানেল গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এসব চুক্তির মাঝে দাম নিয়ে উদ্বেগ থাকায় ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সাথে বাংলাদেশের করা ২৫ বছর মেয়াদী একটি ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানির এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি।
একটি সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের বিদ্যুতের মোট চাহিদার প্রায় এক দশমাংশের জোগান দিয়ে আসছে আদানি। তাই এই চুক্তিটি সরাসরি বাতিল করা কঠিন হবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছে সূত্র দুটি।
এছাড়া ভুলত্রুটির শক্ত প্রমাণ ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনও আদালতে এই চুক্তি নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ জানানো হলে, তা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। পাশাপাশি চুক্তি থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর জন্য একটি পারস্পরিক চুক্তিই হতে পারে এর একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প, বলছে দ্বিতীয় সূত্রটি।
বিজ্ঞাপন
আদানির সাথে চুক্তির এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, ‘‘বর্তমানে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে কমিটি। এটি নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একজন কর্মকর্তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেছেন, আদানি পাওয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হয় প্রায় ১২ টাকা (০ দশমিক ১০০৮ ডলার)।
তিনি বলেন, এটি ভারতের অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের খরচের হারের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। আর ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি। চুক্তির আওতায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি পাওয়ার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। এছাড়াও ভারতীয় অন্যান্য প্ল্যান্ট থেকে প্রায় এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভারতে আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশ চুক্তিটি পর্যালোচনা করছে, আদানি এমন কোনও ইঙ্গিত পায়নি। তিনি বলেন, ‘‘বকেয়া বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি; যা উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় এবং প্ল্যান্টের কার্যক্রমকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।’’
বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানি পাওয়ারের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বকেয়াসহ ভারতীয় অন্যান্য বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কাছে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পাওনা রয়েছে। ডলার সংকটের কারণে এসব বকেয়া পরিশোধে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ।
আদানির মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। তারা শিগগিরই বকেয়া পরিশোধ করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’’