রঞ্জন কুমার মল্লিক, মাদারীপুর : মাদারীপুরে ২৫০ শয্যার সরকারি জেলা সদর হাসপাতালে গত ৬ মাস ধরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনদের খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। এদিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের জানিয়ে দায় এড়িয়ে গেলে সিভিল সার্জন। অপরদিকে গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছেন, পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে খুব শীঘ্রই নতুন কাউকে রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব প্রদান করে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজুল হক খান। তিনি গত এক সপ্তাহ আগে তার বড় ভাইকে চিকিৎসা করাতে ২৫০ শয্যার সরকারি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু ভর্তির পর থেকেই তিনি হাসপাতালের বিশুদ্ধ খাবার পানি সাপ্লাই থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাকে হাসপাতাল থেকে বেশ দূরত্বের একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়। এতে তিনি খুবই ভোগান্তি পড়েন। এই প্রসঙ্গে আজিজুল হক খান বলেন, সদর হাসপাতালে খাবার পানি না থাকায় এখানে আমাদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। চার তলা ভবন থেকে নিচে নেমে আরো ৫ থেকে ৬ মিনিট হেঁটে একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছি। যদি হাসপাতালের প্রতিটি তলায় খাবার পানির লাইন ভাল থাকতো তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হত না। তাই আমি দাবী করছি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে সবার পানি সমস্যা সমাধান করা হোক।
শুধু আজিজুল হক খানই নন। তার মতন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হাজার হাজার রোগী ও তার স্বজনেরা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন কাজী। তিনি বলেন, আমি গত চার দিন ধরে হাসপাতালে আছি। এখানের টয়লেটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। আর খাবার পানিও আনতে হয় নিচে নেমে অনেক দূরে গিয়ে। সরকারি হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগী গরীব ঘরের সন্তান হওয়ায় টাকা দিয়ে পানি কিনে নিতে খুব সমস্যা হচেছ।
রোগীর অনেক স্বজনরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের পাশের সিভিল সার্জন অফিসের টিউবওয়েলটিতেও পানি খুব কম পড়ে। ফলে তাদেরকে দূর দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবী করছেন।
এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ খান জানালেন, পানি সরবরাহের বিষয়টি দেখভাল করে গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর। পানি সংকটের বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা লোক দিয়ে মেরামত করে দেবে। তারা মেরামত না করলে তো আমাদের করার কিছু নেই। বিষয়টি তাদের হাতে।
এদিকে গণপূর্ত প্রকৌশল অধিপ্তর বলছে, সদর হাসপাতালের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রকল্পটি ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে। তারা মাঝে মাঝে এসে সার্ভিস করে দেয়। তাই পানি সরবরাহ সঠিক ভাবে করা যাচ্ছে না। তবে মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার হোসেন জানালেন, হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ খাবার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকবার অবহিত করেছি। কিন্তু তারা ঢাকায় থাকায় সব সময় আসতে পারে না। তাই আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যাতে হাসপাতালে নিয়মিত পানি সরবরাহ করা যায় সে জন্য খুব দ্রুত বিকল্প উপায় খুজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মাদারীপুর হাসপাতল ও গণপূর্থ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রীন টেক কর্পোরেশন’ প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচে সদর হাসপাতালের ৫ তলা ভবনে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫’শ মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি পান করার সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে।