তালা প্রতিনিধি : দুইদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাশ^বর্তী এলাকার পানি তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামই পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও পুনরায় মুষলধারা বৃষ্টিতে ফের ডুবে গেছে গোটা ইউনিয়ন। এতে করে প্রতিটি বাড়ি-ঘরের উঠানে পানি প্রবেশ করে পুনরায় পানিবন্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের অধিক পরিবার। বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও খাদ্য সংকটে প্রাণীকূল। সবজিসহ সকল ধরনের কৃষি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।
তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নটি ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। আর পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১৭টি গ্রামই। কৃষকদের ফসল পানির নিচে থাকায় পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে টানা বর্ষণের ফলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিরাশুনী, লাউতাড়া, পাঁচরোখি, সুভাশুনী, মদনপুর, সুমজদিপুর, দেওয়ানীপাড়া গ্রাম। সকল এলাকার ধানও সবজি পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবন খুব সংকটময় পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে। আগামীতে অবধারিত খাদ্য সংকটে পড়বে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নসহ তালা উপজেলা। ইতোমধ্য বন্যা দুগর্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ প্রণোদনা বিতরণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
পাঁচরোখি গ্রামে শেখ আব্দুস ছাত্তার, মদনপুর গ্রামের আব্দুল খালেক, সুমজদিপুর গ্রামের সুবাসী দাশ, শিরাশুনী গ্রামের মোমিন শেখ, আসমা বেগম জানান, তাঁরা প্রায় দুই মাস পানিবন্ধি। তাদের বাথরুমে যাওয়া, রান্না করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। একইসাথে চারিদিকে পানি থাকায় মারাত্মকভাবে বিষধর সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচরোখী গ্রামের শেখ আব্দুস ছাত্তার বাড়ি হতে ইতোমধ্য দুটি পদ্মগোখরা সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। ভদ্র নদীর পুনঃখনন ছাড়া এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন সম্ভব না। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নসহ তালা উপজেলা সকল মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। ঘেরের বেড়িবাঁধের উপর সকল প্রকারের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি আমন ধান, কৃষকদের সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে মাছ, সবজি, চালের বাজার দাম দিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পানিবন্ধিরা আরও জানান, আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা চাই পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা।
এমন পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সাধারণত যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদী দিয়ে পানি সরবরাহ করতো। বর্তমানে ঐ এলাকার নননিয়া সুইস গেট পলিমাটিতে উঁচু হয়ে পানি নিষ্কাশনে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামঞ্চলের রাস্তা, বাড়ি-ঘর,মৎস্য ঘের প্লাবিত হচ্ছে। খাল ও নদীর তলদেশ বর্তমানে নননিয়া খালের স্লুইস গেটের উপর চার পাঁচ ফুট পানি। তিনি আরও বলেন, যদি বৃষ্টিপাত না হয় তাহলেও এই ইউনিয়নে আগামী ৩-৪ মাস পানিবন্ধী থাকবে। ফলে চৈত্র মাসের ইরি ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।
ইতোমধ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল ও উপজেলা সহকারী কমিশনরার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল আমিন তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পানিবন্ধী এলাকা পরিদর্শন ও ভদ্রা নদী নননিয় খালের স্লুইচ গেট পরিদর্শন ও নওয়াপাড়া হতে গোপালপুর স্লুইচ গেট পর্যন্ত পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের স¦ার্থে গোপালপুর স্লুইচ গেটের দু’পাশে জমে থাকা পলি অপসারণ করতে ভাসমান স্কেভেটর ও স্কেভেটর দিয়ে পলি অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ভদ্রা ও নননিয়া খালে পলি জমে থাকায় ধীর গতিতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। ফলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নসহ কেশবপুর এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। একই সাথে পশু খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল জানান, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের জন্য যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার নননিয়া স্লুইস গেট এলাকায় পলি মাটি অপসারণের জন্য তিন-চরাটি স্কেভেটর দিয়ে কাজ চলমান আছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি যোক্তিক কোন সমাধান নয়। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প গ্রহণ করে নননিয়া খাল, ভদ্রা নদী প্রশস্ত করে পুনঃখনন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আশু পানি নামাতে বিকল্প পথ হিসেবে দধিসারা বিল দিয়ে শালতা নদীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।