ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠিতে কলেজ ছাত্রীকে গলাটিপে হত্যার পরে মুখে বিষ ঢেলে আতœহত্যার প্রচারণা চালানোর কথা স্বীকার করেছে নিহত কলেজ ছাত্রীর স্বামী গ্রেপ্তারকৃত মাইনুল ইসলাম হিমু আকন (২৫)। মঙ্গলবার বিকালে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম কবীর হোসেন ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মাইনুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে মঙ্গলবার সকালে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে হিমু। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সরোয়ার হোসেন গতকাল বিকাল ৩ টায় গ্রেপ্তারকৃত মাইনুল ইসলামকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন করেন। বিকাল ৫ টায় স্বীকারোক্তি গ্রহণ শেষে মাইনুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম কবীর হোসেন।
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে হিমু জানিয়েছে, গত রবিবার দুপুর একটার দিকে গলা টিপে স্ত্রীকে হত্যার পর বিষয়টি তার পিতা মিল্টন আকনকে জানায়। মিল্টন আকন তার ছেলেকে বিষ খাওয়ার ঘটনা সাজানোর কথা শিখিয়ে দেয়। পিতার পরামর্শে হিমু তার মৃত স্ত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিনের মুখে তুঁতে ঢুকিয়ে দেয় এবং নিজেও তুঁতে খায় এবং অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করে।
প্রায় দুই বছর আগে দুই পরিবারের সম্মতি ছাড়াই শহরের কাঠপট্টি সড়কের মিল্টন আকনের ছেলে মাইনুল ইসলাম আকন হিমু একই এলাকার আসলাম ফরাজীর মেয়ে বিএ দ্বতিীয় বর্ষের ছাত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে হিমুর বাবা মিল্টন আকন এবং সৎ মা আয়শা বেগম এ বিয়ে মেনে নেয়নি। । এ নিয়ে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগে থাকত হিমুর পরিবারে। হিমুর স্ত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বেশীরভাগ সময় তার বাবা মায়ের সাথে থাকতো। হিমুও মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে থাকতো। কিছুদিন আগ থেকেই হিমু তার বাবা মাকে তাদেরকে মুড়ির মিলের কক্ষে একটু থাকার জায়গা দেওযার জন্য অনুরোধ করে আসছিল।
রবিবার সকালে সুরাইয়াকে ফোন করে হিমু তাঁর বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মুড়ি ও সেমাই তৈরির কারখানার দোতলায় আসতে বলে। বেলা ১২টার দিকে ওই কক্ষে আসে সুরাইয়া। স্ত্রীর সঙ্গে ঘন্টাখানেক অন্তরঙ্গ সময় কাটায় হিমু। দুপুর একটার দিকে বাবার সমালোচনা করায় সুরাইয়ার সাথে হিমুর কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায় হিমু সুরাইয়াকে চড় মারে এবং সুরাইয়াও হিমুকে পাল্টা ধাক্কা মারে। উত্তেজিত হিমু গলাটিপে শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনা হিমু তাঁর বাবাকে জানায়। বাবা মিল্টন আকন মৃত স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়ার বুদ্ধি দেয় ছেলেকে। এমনকি ছেলেকেও বিষপানের পরামর্শ দেন। বাবার কথামতো হিমু মৃত স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে দেয়। নিজেও বিষপান করে চিৎকার দেয়। মৃত অবস্থায়ই ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সুরাইয়াকে। কিছুটা অসুস্থ্য অবস্থায় হিমুকে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হিমু জানিয়েছে সে আগে নেশা করতো, এখন করে না। সে এসএসসি পাস হলেও তার স্ত্রী বিএ পড়ে। বেকারত্ব এবং পরিবার বিয়ে মেনে না নেয়ায় সে কিছুটা হতাশাগ্রস্থ ছিল। বাবাকে নিয়ে কটুক্তি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে হিমু স্ত্রীকে গলা টিপে ধরে। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতদেহ ফেলে রেখে ওপর থেকে নিচে নেমে হিমু তাঁর বাবার কাছে যায়। বাবা তাকে স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে ও ছেলেকে বিষ পানের বুদ্ধি দেয়। মৃত্যুর পরের সব নাটক সাজিয়েছেন হিমুর বাবা মিল্টন আকন। পুলিশ মামলার অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।