পাইকগাছা অফিস : পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধে স্থানীয় বাসিন্দার কর্তৃক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে এলাকাবাসীর ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচি দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য পলাশ রায় এর সভাপতিত্বে সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শত শত ভুক্তভোগী তাদের সীমাহীন দুঃখদুর্দশার কথা তুলে ধরেন। টেলি ফিল্ম নির্মাতা জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মসূচি’তে বক্তৃতা করেন, দেলুটির প্যানেল চেয়ারম্যান সুকুমার কবিরাজ, প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র রায়, সৌরভ রায়, পরিমল কান্তি রায়, সুব্রত কুসার সানা, শিক্ষক অসীম মন্মাডল, মানবেন্দ্র ঘোষ, ইউপি সদস্য বদিয়ার রহমান, মেরী রাণী সরদার, রামচন্দ্র টিকাদার, রিংকু রায় ও পবিত্র সরদার, সাবেক ইউপি সদস্য চঞ্চল রানী রায়, রাহেলা খাতুন, অখিল হালদার, তুষার কান্তি, টেলি ফিল্ম নির্মাতা সংস্থার অমিত রুদ্র, সাইমা নাছরিন প্রমুখ। এদিকে দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, উপকূলীয় দ্বীপ বেষ্টিত এই অঞ্চল এমনিতেই অবহেলিত। সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় রেমালে এই জনপদের পাকা ও কাঁচা রাস্তা সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত। শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত মৎস্য ও কৃষি খাতে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসকল বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে স্বারক্ষলিপি প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দেলুটি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নং পোল্ডার টি চারপাশে নদীবেষ্টিত বাঁধ দিয়ে গঠিত। পোল্ডারের কোনো এক জায়গায় বাঁধ ভাঙলে পুরো ১৩টি গ্রামই প্লাবিত হয়।২২ আগস্ট দুপুরের দিকে নদীভাঙনের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্লাবিত ওই সকল গ্রাম। লোনাপানির তোড়ে ভেসে যায় তাঁর মাছের ঘেরও। প্রায় এক সপ্তাহ ধরেৎ পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দার। অভিযোগের সুরে বক্তারা বলেন, ‘আমরা ভাত চাইনে, তিরান (ত্রাণ) চাইনে। আমরা চাই একটা ভালো বাঁধ। ভালো বাঁধ হলি আমরা জমিতে কিছু কইরে খাতি পারবানে।’ গ্রামগুলোর বাসিন্দারা আরো বলেন, প্রতিবার বড় ঘূর্ণিঝড়ে এলাকার বাঁধ কোথাও না কোথাও ভেঙে যায়। এতে কয়েক বছর ধরে তাঁরা একটু একটু করে যে ক্ষতি কাটিয়ে উঠছেন, সেটা আবার নিমেষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এ কারণে কখনো গুছিয়ে ওঠা হয় না। তবে একবার টেকসই বেড়িবাঁধ হলে তাঁদের দুঃখ অনেকটাই ঘুচে যেতে পারে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময়ও ভদ্রা নদীর গোপী পাগলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। তখনো আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁরা। ৫৭ বছর বয়সী রবিন কবিরাজ এসেছিলেন ওই মানববন্ধনে। তিনি বলেন, তাঁর ১২ বিঘা জমি ছিল। নদীভাঙনে সবই হারিয়ে গেছে। এখন নিজের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁইটুকুও নেই। অন্যের জমিতে ছোট একটা ঘর করে বসবাস করছেন। আর সংসার চলছে দিনমজুরি করে। এর মধ্যে এমন দুর্ভোগের তাঁর নাজেহাল অবস্থা। গতকাল মানববন্ধনের পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও চালান গ্রামবাসী। পরে গণস্বাক্ষর নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ রায় বলেন, এবারের ভাঙনে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চার শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। শত শত মানুষের ঘর ভেঙে পড়েছে। এই এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস আমন ধান। দু’বার বীজতলা ও রোপণ করা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনে বাসিন্দারা ধান রোপণ করেছেন। এবার ধানের উৎপাদনের খরচও অনেক বেশি পড়েছে। ‘টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকলে কখনো এ এলাকার মানুষের উন্নয়ন হবে না। আমরা চাই, সরকার এই এলাকায় যেন দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেন।’