কয়রা ,প্রতিনিধিঃ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের জন্য নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র।সেখানে রয়েছে সাড়ে তিন শ বছরের পুরোনো মন্দির। বনে আসা যাওয়ার পথে পুরোনো বসতির ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে মন্দিরের আশপাশে দেখা যায় বাঘের আনাগোনা। বাঘের টাটকা পায়ের ছাপও পাওয়া যায় এখানে। জেলেরা তাই এই স্থানের নাম দিয়েছেন ‘বাঘের বাড়ি’।
বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে সুন্দরবনের সবচেয়ে বিখ্যাত পুরনো স্থাপনা হিসেবে শেখের টেককে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে ওই স্থানটিতে কারা বসবাস করতো বা কী কারণে শেখেরটেক নাম হলো, তা কোনো ইতিহাস গ্রন্থে সঠিকভাবে তা বলা হয়নি। তবে অধিকাংশ গ্রন্থে এটিকে মোগল আমলের স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
১৯১৪ সালে প্রকাশিত সতিশ চন্দ্র মিত্রের লেখা যশোহর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে স্থানটির কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই বইয়ে লেখা হয়েছে, “শেখের খাল ও কালীর খালের মধ্যেবর্তী অপেক্ষাকৃত উচ্চভূমি বিশিষ্ট নিবিড় জঙ্গলকে শেখের টেক বলে। এখানে সুন্দরী গাছ ,যথেষ্ট হরিণের সংখ্যা অত্যন্ত অধিক।বাঘ ও হিংস্র জন্তুর আমদানিও বেশি।
খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা কাটকাটা থেকে নদী পথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে শিবসা নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে শেখের খাল। সেখানে রয়েছে মোঘল আমলের একটি কালি মন্দির।
সুন্দরবনের গহীনে থাকা মন্দিরটি ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহের কারণেই ২০২১ সালে শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার জন্য পন্টুন, ওয়াচ টাওয়ার, আরসিসি ঢালাই রাস্তা, বিশ্রাম নেওয়ার ঘর।
এখানে মাটি পুড়িয়ে বানানো ইট, শামুক-ঝিনুক দিয়ে সিমেন্টের মতো আঠালো ক্লে দিয়ে বানানো পুরোনো স্থাপনা দেখা যাবে। ওই জায়গায় বিভিন্ন সময় ঐতিহাসিকরা গেছেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সেখানে যাওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছিল। সেই কারণে বন বিভাগ ইকোট্যুরিজম সাইড ডেভেলপমেন্ট করেছে।
শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে সীমিত পরিসরে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কয়রা থেকে প্রথম সরকারি রাজস্ব (কয়রা কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন) দিয়ে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে শেখেরটেক ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র ভ্রমণে যান একদল যুবক। তারা জায়গাটি ঘুরে এসে বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে অসাধারণ একটি স্থাপত্য শেখেরটেক মন্দির। সেখানে দেখা যায়, শেখের টেক খাল থেকে মন্দির পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার কংক্রিটের ফুট ট্রেলই নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ফুট ট্রেইলটি মন্দিরের চার পাশ থেকে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের বনের উপরিভাগ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। বনের মধ্যে কিছু স্থানে ইটের রাস্তাও তৈরী করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে একটি টয়লেটের ব্যবস্থাও রয়েছে।