খুলনা : আমাকে ছেলেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে মারছে। ছেলেকে হাসপাতালে রেখে তারা পালিয়ে যায়। তাকে ডেকে নিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। এরকম অভিযোগ মৃত জাহিদের মা রাবেয়া খাতুনের। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ২নং কাশেম নগর এলাকার জাহিদের বাসায় গেলে শোকাহত মায়ের ছেলের হত্যা বিচার চেয়ে প্রতিবেদকের কাছে এ দাবি তুলে ধরেন। এদিকে জাহিদের ব্যবহৃত দুই মোবাইল ও ম্যানিব্যাগের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে জাহিদের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
খুলনার থানা ওসি মিজানুর রহমান বলেন, জাহিদের ব্যবহৃত মোবাইল ও ম্যানিব্যাগ ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত মৃত পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে আসেনি।
মৃত জাহিদের রাবেয়া খাতুন শোকাহত কান্নায় এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার জাহিদকে তার স্ত্রী উম্মে রুম্মান খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করার পর পালিয়ে যায়। হাসপাতালে উপস্থিত হলে তখন জাহিদ একাই ছিল। ওখানকার লোকজন বলে একটা মহিলা ও একজন মরুব্বী আপনার ছেলেকে ভর্তি করান। তার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিছে।
জাহিদের ছোট মামা মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, খুমেক হাসপাতালে জাহিদের স্ত্রী উম্মি রুম্মান তার ভাগ্নেকে রেখে পালিয়ে যায়। ভাগ্নেকে বাচানোর চেষ্টা না করেই উল্টো তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেছে। আমার ভাগ্নে মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতেও তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথাও বলে গেছেন। উম্মে রুম্মান ডেকে নিয়ে তার ভাগ্নেকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। উম্মে রুম্মান বাচানোর চেষ্টা করেনি, নিজেকে বাচানোর জন্য এখন সে নাটকের আশ্রয় নিচ্ছে।
ওর বড় ভাই সবুজ এখনো এসে পৌছায়নি। লাশ দাফন শেষে ভাগ্নে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
জাহিদের ছোট বোন আইরিন বলেন, হাসপাতালে গিয়ে দেখি, ভাইয়ের পোড়া শরীর সামনের দিক থেকে দেখে আমি চিনতে পারিনি। একাধিকবার চিকিৎসকদের বলেছি ও আমার ভাই না। পরে তার পেছন সাইট দেখে চিনতে পারি ও আমার ভাই। হাসপাতালে কে ভর্তি করিয়াছে, তখন বলে এক মহিলা ও সাথে এক লোকছিল। তারাই বলেছে গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে তার গায়ে আগুন লেগে যায়। রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ভাই মারা যায়। ভাইয়ের ব্যবহৃত দামি দুইটি মোবাইল সেট ও ম্যানিবেগ হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ভাইয়ের কাছ থেকে সোনা ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার পর উম্মে রুম্মান ভাইকে ডিভোর্স দিছে। তার যাওয়ার নেয়ার দরকার সবতো পেয়ে গেছে। এখন তার ভাইকে প্রয়োজন শেষ হওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন। মঙ্গলবার এশার বাদে ভাইয়ের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। বড় ভাই সবুজ রাত ৮টার পর খুলনায় এসে পৌছান। তার উপস্থিতিতেই জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন উম্মে রুম্মানের বড় বোন পারভিনের বলেন, জাহিদ তার বাপের বাড়িতে আমাদের দেয়া জামা-কাপড় দিতে আসে। একটি ব্যাগের মধ্যে জামা-কাপড় ছিল। ওই ব্যাগের মধ্যে প্যাট্রোল ছিল, জাহিদ ওটা নিজের গায়ে ঢেলে ম্যাচলাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এটা তার ছোট বোন উম্মের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় জাহিদ হোসেন তার শ্বশুর বাড়ি নিরালা বাগমারা লেনে গেলে তার শরীর আগুন পুড়ে ঝলসে যায়। তার স্ত্রী উম্মে রুম্মান তাকে খুমেক হাসপাতালে ভর্তির সময় তাকে গ্যাস সিলিন্ডার আগুন লেগে ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। ভর্তির পর সে ২-৩ ঘন্টা খুমেক হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান। কয়েক ঘন্টা পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিজেও আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন। ওই খুলনার থানার ওসি হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। তার তাকে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ওই দিন রাতে জাহিদের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নিয়ে হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোববরা রাত ৯টার দিকে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা চিকিৎসাধীন জাহিদকে মৃত ঘোষনা করেন।