ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি : দক্ষিনাঞ্চলের মৎস্য সম্পদে ভরপুর ডুমুরিয়া উপজেলার মৎস্য চাষীদের ঘেরের পানি , মাটির গুনাগুন পরিক্ষা করতে আর উপজেলা সদরে মৎস্য আসতে হবে না। তারা নিজ ঘেরের পাড়ে থেকেই সেই সুযোগ পাবেন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াডে প্রশিক্ষক তেরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডুমুরিয়ায় প্রায় ২৫ হাজার মৎস্য চাষী রয়েছেন। তাদেরকে মাছ ও চিংড়ি চাষে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এতেই ডুমুরিয়ায় মৎস্য সম্প্রসারণ সেবা সহজীকরণ কার্যক্রমে উপকৃত হচ্ছে শতশত চাষী।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রায় পচিশ হাজারটি মাছ ও চিংড়ি ঘের এবং প্রায় তেইশ হাজার চাষি রয়েছেন। বিপুল সংখ্যক চাষিকে মৎস্য অধিদপ্তরের স্বল্পসংখ্যক জলবল দিয়ে সেবা প্রদান করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে হলে চাষিদের মাঝে উন্নত আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটানো একান্ত প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ডুমুরিয়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কুমার মিস্ত্রী মৎস্য সম্প্রসারণ সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি ইনোভেশন কার্যক্রম উদ্ভাবন করেছেন। এ কার্যক্রমের আওতায় উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১২৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ওয়ার্ডে চাষির পুকুর পাড়ে মাছ চাষের ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রশিক্ষণে মাছ চাষিগণ উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারছেন এবং ঘেরের মাটি পানি পরীক্ষার মাধ্যমে করনীয় সম্পর্কেও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কার্যক্রমটি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট ব্যপকভাবে গ্রহনযোগ্য ও প্রশংসিত হচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে কার্যক্রমটি শুরু হয়ে এ পযর্ন্ত ৬টি প্রশিক্ষণে ৩১৬জন চাষী সরাসরি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহন করে উপকৃত হয়েছেন। ১২৬টি ওয়ার্ডে প্রায় ছয় হাজার জন চাষি প্রশিক্ষণ সেবা পাবেন।
নিয়ে জানা যায় শোভনা, রংপুর, কাটেঙ্গা, খর্নিয়া ইত্যাদি অঞ্চলের চাষিরা এ কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে প্রশিক্ষন গ্রহন করেছেন। ডুমুরিয়ায় অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে যেখান থেকে চাষিরা সহজে উপজেলায় আসতে পারেন না সেখানে কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হওয়ায় ঐসকল চাষিদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকতার নেতৃত্বে খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মিজানুর রহমানসহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ এ কার্যক্রমটি আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করছে। কার্যক্রমটি স্থায়িত্বশীল করার লক্ষ্যে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ১জন স্থানীয় মৎস্য প্রশিক্ষক (LFT- Local Fisheries Trainer) গড়ে তোলা হচ্ছে। ১২৬ জন মৎস্য প্রশিক্ষক প্রতিমাসে মাত্র ৫জন চাষিকে পরামর্শ সবা প্রদান করলে বছরে আরো প্রায় সাত হাজার জন চাষি উপকৃত হবেন। সবমলিয়ে বছরে বার-তের হাজার জন চাষি এ কার্যক্রমের আওতায় আসবেন। গত ২৯ নভেম্বর তারিখে খর্নিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত সভায় মৎস্য অধিপ্তরের মৎস্য চাষ বিষয়ক উপপরিচাক মোঃ গোলজার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। চাষিদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন ও সৃষ্টিশীল উদ্দ্যোগে তিনি অভিভুত হয়ে এ ধরনের কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার অুনরোধ জানান। খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামিম হায়দার এ সৃষ্টিশীল কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান এবং সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক রণজিৎ কুমার পাল এ ধরনের উদ্দ্যোগে স্বাগত জানিয়ে প্রতিটি উপজেলায় এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাগণকে অনুরোধ জানান।
এ প্রসঙ্গে ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজোয়ান মোল্ল্যা বলেন ‘‘উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার এ ধরনের উদ্দ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও ধন্যবাদযোগ্য। তাঁর এ কার্যক্রম গ্রহনের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষিরা দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছে। ইতোপূর্বে কোন কর্মকর্তা নিজে চাষির ঘেরে গিয়ে প্রশিক্ষন দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। আমি এ কার্যক্রমের সফলতা কামনা করি।’’
ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসার সরোজ কুমার মিস্ত্রী জানান, উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাছ চাষের আধুনিক প্রযুক্তি ও সম্প্রসারণ সেবা প্রতিটি চাষির দোড়গোড়ায় পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ইনোভেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। কার্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে কোনরুপ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ছাড়া বছরে প্রায় বার-তের হাজার চাষী সরাসরি মাছ চাষের উন্নত আধুনিক প্রযুক্তি ও সেবা গ্রহন করতে পারবেন। ফলে ডুমুরিয়ার মৎস্য উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।