খুলনা : খুলনাবাসীর কাছেই বহুল প্রতিক্ষিত আধুনিক ও উন্নতমানের একটি স্টেডিয়াম। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ভবন, ভাঙ্গা গ্যালারী ক্রীড়ামোদীদের হতাশ করেছিলো। এ সবই বদলে গিয়েছিলো বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায়। মাঠের কাজ শেষ হয়েছিলো অনেক আগে। ভবনে রং করা, গ্লাস ফিটিংস, পরিপাটি ও সুন্দর আধুনিক মানের একটি স্টেডিয়াম পেয়েছিলো খুলনাবাসী। শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কিন্তু নোংরা রাজনীতির আক্রোশের বলি হয়ে এক রাতের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো স্টেডিয়ামটি। শুধু খেলোয়াড় নয়, সেই আকাঙ্খা যখন পূরণের পথে ঠিক সেই সময় পড়লো ছেদ।
মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যদের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের ভোট গণনা নিয়ে দ্বন্দ্বে জেলা স্টেডিয়াম ভবনে ব্যাপক ভাংচুর হয়। গোটা স্টেডিয়াম এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। গুলিবর্ষণ ও বোমাবাজির ঘটনাও ঘটে। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা দফায় দফায় নবনির্মিত এ স্টেডিয়ামে নির্মমভাবে ভাঙচুর চালায়। ঘটনার পর ভোট গণনা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থীই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় নেতা। ভাংচুরে সব মিলে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রায় ১০ জন আহত হন। স্টেডিয়ামের লকারও রেহাই পায়নি দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে। স্টেডিয়ামের লকারও রেহাই পায়নি দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। মোট ১৮৮৭ জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করেন। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এবং সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে দু’টি প্যানেলের ২০ জন করে মোট ৪০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন।
এদিকে গতকাল বুধবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরী সভা বিকালে খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভা কক্ষে খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি আলহাজ¦ মোর্ত্তজা রশিদী দারার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা ষ্টেডিয়াম ভবনে খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচনের ভোট গননা চলাকালে একদল দুর্বৃত্ত কর্তৃক গোটা ষ্টেডিয়াম ভবনের সম্পদ ভাংচুর ও যে তান্ডবলীলা চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানানোর পাশাপাশি ঘটনার সময় খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে অযাচিতদের দুর্ব্যবহার ও আহত করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সভায় একই সাথে বর্তমান ষ্টেডিয়ামের যে ভঙ্গুর অবস্থা সেই অবস্থায় খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও দর্শকদের নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দিন পরে বাংলাদেশ যুব গেমস্-২০১৮ জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে ভাংচুরের ঘটনার পরে জেলা ষ্টেডিয়াম অরক্ষিত হয়ে পড়ায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবী জানানো হয় এবং এ ঘটনায় খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহসান, হাজী মোঃ মোতালেব মিয়া, শেখ হেমায়েত উল্লাহ, জি, এম, রেজাউল ইসলাম, হাসান জহীর মুকুল, মোঃ মোমতাজ আহম্মেদ (তুহিন), মোল্লা খায়রুল ইসলাম, মোঃ সুজন আহম্মেদ, শরীফ মোঃ বদরুজ্জামান (মামুন), নাজমুস সাদাত সুমন, এস, এম, ইনামুল কবির, কনক রহমান, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিরু, ফয়সাল আহম্মেদ পপা, এস, ওয়াহিদুর রহমান (বাবু), শাহনাজ ফাতেমা আজাদ মৌরী, পারভীন রহমান।
অপরদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিশু স্বাস্থ্য সেবা পরিষদের পক্ষে এ্যাডঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম উক্ত ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনে শিশু স্বাস্থ্য সেবা পরিষদের পক্ষে ২১-৪০ নং ব্যালট পর্যন্ত প্রার্থীদের বিপুল সংখ্যক ভোট প্রদান করায় খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের সকল শ্রেনীর সদস্যদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। শিশু স্বাস্থ্য সেবা পরিষদের অধিক সংখ্যক প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয়ের পথে যখন ভোট গননা চলছিল তখন অনাখাংকিত ঘটনায় ফলাফল ঘোষনা করতে না পারার জন্য খুলনাবাসী সহ শিশু ফাউন্ডেশনের সকল শ্রেনীর সদস্যরা দুঃখ পেয়েছে ও হতবাক হয়েছে। খুলনাবাসীসহ শিশু ফাউন্ডেশনের সকল শ্রেনীর সদস্যদের সাথে সমব্যথিত হয়েছি।