খুলনা : প্রতিপক্ষের কোপের আঘাত মাথায় নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় সুশংকর রায়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যখমের গুরুত্ব বুঝে সুশংকরের মাথায় আটটি সেলাই করেন। দীর্ঘদিন হাসপাতালের বারান্দায় ব্যাথার যন্ত্রনায় শরীলের সাথে যুদ্ধ করেন সুশংকর। কিন্তু ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় শরীলের যুদ্ধে জয় লাভ করলেও হার মানেন প্রতিপক্ষে টাকা ও অফিস সহকারী রফিকুলের কাছে। সুশংকরকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় শরীলে জখমী ফোলা উল্লেখ করে। অথচ প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় এন্টি খাতা, যে খাতা দেখে ডাক্তার মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করেন খোদ সেই খাতায়ই এন্টি নেই তার জখমী কোপের আঘাতের কোন বিবরণ। যেখানে লেখা আছে সুশংকরের শরীরে জখমী ফোলার বিবারন। আর এ সব কিছু করেছেন অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম বলে জানান ভিকটিম সুশংকর রায়। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, কথাটি যেমন সত্য তেমনি অফিস সহকারির কারনে ডাক্তারদের চোখে ধরা না পড়লে ও। ধরা পড়েছে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের চোখে।
এমসি সার্টিফিকেটে মাথায় জখমি পরিবর্তে শরীরের জখমী ফোলা উল্লেখ করায় পুনরায় খুমেক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে পুনরায় বোর্ড গঠন ও ভিকটিম পুনরায় পরীক্ষাপূর্বক জখমি সার্টিফিকেট প্রদানের নির্দেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত। বাদী স্বরস্বতী রায় ও ভিকটিম স্ব শরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি আপত্তি জানালে বিজ্ঞ বিচারক খুমেক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ বিচারক এ আদেশে উল্লেখ করেন সুশংকরের মাথায় রাম দায়ের কোপের দাগ রয়েছে। খুমেক হাসপাতালে অফিস সহকারি বিরুদ্ধে আসামীর পক্ষে ম্যানেজ হওয়ার অভিযোগ ভিকটিমের। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে। যার নং-সি, আর-১৩৬/১৭। এই মামলা বাদী স্বরস্বতী রায়। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট কে ও ভুল প্রমাণ করতে পিছুপা হননি রফিকুল ইসলাম।
আফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি এর সাথে জড়িত না। আমি কিছু জানি না। ডাক্তার যা দেখেছে তাই দিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট মনে হয় মারার সময় সামনে দাঁড়ায় ছিল যে রাম দা দিয়ে কোপ দিছে না দা দিয়ে কোপ দিছে।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, কেউ আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। তবে আদালতের আদেশ দেখালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করেন। প্রথমিক তদন্তে রফিকুল কে ডেকে খাতায় পত্র খুজে কোথাও মাথায় জখম উল্লেখ পাননি। তবে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে মাথায় জখমের কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি আরও বলেন,হাসপাতালের অফিস সহকারি যদি কারো পক্ষে হয়ে গোপনে এই অবৈধ কাজটি করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং সঠিক তদন্ত করে ভিকটিমকে সঠিক সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নিয়ম অনুযায়ী আদালত বা থানা থেকে ভিকটিমের ইনজুরি সার্টিফিকেট চাওয়ার পরই দেয়া হচ্ছে। এর আগে যেই হোক না কেন এমসি প্রদান করা হচ্ছে না। আদালত পুনরায় চাইলে সঠিক নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা দেয়া হবে।
মামলার বাদী স্বরসতী রায়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট বিপ্লব রায় জানান, বাদী ছেলে সুশংকর রায়ের মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপে চিহৃ রয়েছে। খুমেক হাসপাতালে পুলিশ কেস স্লিপে তার মাথায় ৫টি সেলাই কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু যখন ওই হাসপাতাল থেকে শংকর রায়ের এমসি আদালতে প্রেরণ করা হয়। তখন দেখা যায়, মাথায় আঘাতের কথা উল্লেখ না করে শরীরের জখমি ফোলার কথা বলা রয়েছে। এতে বাদী আদালতে আপত্তি জানালে, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর ১ আদালত বিজ্ঞ বিচারক বাদী ও ভিকটিম উভয়কে আদালতে তলব করেন। এ সময় বিজ্ঞ বিচারক মারুফ আহম্মেদ ভিকটিম শংকর রায় মাথায় আঘাতের চিহৃ ও সেলাই দেখতে পান। তখন বিজ্ঞ বিচারক খুমেক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে পুনরায় বোর্ড গঠন ও ভিকটিমকে পুনরায় পরীক্ষা পুর্বক মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) আগামী ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ এর মধ্যে প্রদানের নির্দেশ দেন। অ্যাডভোকেট বিপ্লব রায় বলেন, আসামীর পক্ষে ম্যানেজ হয়ে ওই এমসি প্রেরণ করা হয়েছে।