মূল পরিকল্পনাকারী ‘তুহিন’ আটক হলেই আসল রহস্য উন্মোচন হবে
কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : গত ২৪ ডিসেম্বর শনিবার খুলনা থেকে কৌশলে সন্ত্রাসীরা মারপিট করে মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে এসএম শামসুল আরেফিন ওরফে রনি ও মোঃ কামরুজ্জামান ওরফে সবুজ এই দুইবন্ধুকে। ভাগ্যক্রমে রনি এই যাত্রা বেঁচে গেলেও গত ১৬ দিনেও খোঁজ মেলেনি সবুজের। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় ওই দিনই মোরেলগঞ্জের ইন্দুরকানি থানা পুলিশ ৭ জনকে আটক করে। এর মধ্যে পরশ ওরফে হাসান ওরফে ওহিদুজ্জামান ওরফে এনামুল, হাফিজুর রহমান ও হাসিব আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী তুহিনের নাম উঠে আসে। সে আটক হলেই ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা জবানবন্দি প্রদানকালে মূল পরিকল্পনাকারী তুহিনের নাম উল্লেখ করেছেন। তার নির্দেশেই সুকৌশলে রনি ও সবুজকে নিয়ে যাওয়া হয়। খুলনা থেকে নিয়ে যায় পরশ ওরফে হাসান ওরফে ওহিদুজ্জামান ওরফে এনামুল। এছাড়া তার সাথে ছিল বিএল কলেজের একজন শিক্ষার্থী পরিচয়দানকারী। তুহিনের বাড়ি পিরোজপুর সদর সাঈদ ফাউন্ডেশনের পাশে। তার পিতা একজন কাঠগোলার ব্যবসায়ী। তার পিতা কুঁজো হয়ে হাটে। তুহিনই হচ্ছে এই কিলিংয়ের মূল পরিকল্পনাকারী। খুলনা নগরীতে বসুপাড়া বাঁশতলা এলাকায় তুহিনের দাদার বাড়ি রয়েছে। এছাড়া আবুল খয়ের মিয়া নামের ট্রলার মাঝিকে আটক করলে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। ওই সূত্র মতে, কেডিএতে যখন পরশ যায়। সেখানে সিঁড়ি ঘরের ক্যামেরা, চিফ ইঞ্জিনিয়ারের করিডোর ও স্টেট অফিসের করিডোরের ক্যামেরা সচল রয়েছে। ওই দিনের ঘটনায় ক্যামারার ফুটেজগুলো ভালোভাবে তদন্ত করলেই বিএল কলেজের ওই শিক্ষার্থীকেও শনাক্ত করা সম্ভব। এছাড়া তাদের সাথে আরও কেউ ছিলো কি না তা জানা সম্ভব বলে মনে করেন।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অপহরণের শিকার রনির মামা আওয়ামী লীগ নেতা মল্লিক আবিদ হোসেন বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন অহিদুজ্জামান হাসান ওরফে পরশ (২১), হাফিজুল ইসলাম (১৯), মোঃ মাহমুদ (১৯), মোঃ হাসিব হাওলাদার (১৯), হাছিব হাওলাদার-২ (১৮), মোঃ হাফিজুর রহমান (১৯) ও সাইফুল ইসলাম (২০)। এর মধ্যে তিন আসামি জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি ২/১ দিনের মতো হয়েছে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে মামলার আইও ছিলেন এসআই জেল্লাল হোসেন। সবুজ জীবিত না মৃত আছে এখনো বলা যাচ্ছে না। যেহেতু তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তের স্বার্থে পিরোজপুরে ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রয়োজন। তিনি বলেন, এর আগে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলায় ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। যার মধ্যে তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এরা হচ্ছেন ওয়াহিদুজ্জামান হাসান ওরফে পরশ, হাফিজুর রহমান ও হাসিব। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে বিচারক শাহিদুল ইসলাম এর কাছে ওই আসামিরা জবানবন্দি প্রদান করেন।
নিখোঁজ সবুজের আপন ফুফাতো ভাই আমিন হোসেন মিঠু বলেন, কিছু আগে বরগুনায় একটি লাশ পাওয়া যায়। সেখানে যাওয়ার পর ওই লাশটি আকৃতির দেখে মনে হচ্ছে ওইটা সবুজের লাশ। আমরা লাশ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ টেস্টের আবেদন করেছি। সবুজের স্ত্রী বৈশাখী রহমান বরগুনা যাওয়ার আগে তার স্বামী সবুজ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি বলেন, মুখ ও মাথার কিছু আকৃতি দেখে আমরা ধারণা করছি ওইটা সবুজের লাশ।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ডিসেম্বর শনিবার মোরেলগঞ্জে বিল্ডিংয়ের ডিজাইনের কথা বলে সুকৌশলে রনি ও সবুজকে নিয়ে যায় অপহরণকারী আসামি ওয়াহিদুজ্জামান হাসান ওরফে পরশ। পরবর্তীতে ট্রলারের ওঠার পর কিছু দূরে গিয়ে ৭-৮ জন সন্ত্রাসী তাদেরকে মারপিট করে মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে ফেলে দেয়। ওই সময় আশেপাশের ট্রলারের মাঝিরা রনিকে নদী থেকে উদ্ধার করতে পারলেও এখনো পর্যন্ত সবুজকে উদ্ধার করতে পারেনি।