সেলিম হাযদার, সাতক্ষীরা : শিক্ষক সংকট থেকে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে তালার ঐতিহ্যবাহী বিদে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যাপীঠটির ১৭ জন শিক্ষকের স্থলে প্রায় অর্ধেক দিয়ে পাঠদান দিতে রীতিমত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের। এছাড়া শিক্ষকদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে ছাত্রদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ। শ্রেণী কক্ষের বাইরে নিজস্ব কোচিং সেন্টার পরিচালনা করায় ছাত্রদের সাথে এমন বৈষম্য বলে মনে করছেন অভিভাবকসহ ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন,সরকার থেকে তাদের এমন কোন নির্দেশনা এখন পর্যন্ত হাতে এসে পৌছেনি। এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। অভিভাবকদের অনেকে আবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদ্যাপীঠটি থেকে।
জানাগেছে,বিদ্যালয়টি ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা পরবর্তী অত্যন্ত সুনামের সাথে তৃণমূলের শিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ সংকট তাদের সে অগ্র যাত্রাকে ব্যাপকভাবে বাঁধাগ্রস্থ করছে। সূত্র জানায়,বেশ কিছুদিন যাবৎ বিদ্যালয়টি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। আছে শিক্ষক সংকটও। প্রায় সাড়ে ৫শ’ শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পাঠদানে সেখানে ১৭ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৮ জন। এমন অবস্থায় ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদানে রীতিমত বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। নানা সংকটে সেখানকার পড়া-লেখার মাণও চলে গেছে নি¤œ দিকে। সর্বশেষ জেএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি থেকে সর্বমোট ৮০ জন পরীক্ষা দিলেও পাশ করেছে ৭৬ জন। তবে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে অত্যন্ত কম সংখ্যক ছাত্র। ফলাফলে দেখা যায়,এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ জন,এ গ্রেড পেয়েছে ৩১ জন,এ- পেয়েছে ২৭ জন, বাদ-বাকীরা কোন মতে পাশ করেছে।
এদিকে শিক্ষা মাণের এমন ক্রমাবনতিতে অভিভাবক মহলে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। ভবিষ্যতে এমন অবস্থা চলতে থাকলে ছাত্রদের ধরে রাখা কষ্টকর হবে বলেও আশংকা করছেন কেউ কেউ।
অভিযোগে জানাযায়,বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুধাংশু কুমার ও মোঃ মঈনুল ইসলাম সেখানে চাকুরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য দ্যিালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা কোচিং করাচ্ছেন। আর সমস্যাটা মূলত সেখানেই। নিজ কোচিংয়ের ছেলেদের বাড়তি সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষায় নম্বর বৈষম্যের ঘটনাও ঘটছে। কোচিংমুখী থাকার জন্য একদিকে যেমন নির্দিষ্ট পুথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে তাদের সরকারের সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁধাগ্রস্থ করছে অন্যদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানষিক প্রতিবন্ধিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিকট জানতে চাইলে তারা এপ্রতিনিধিকে বলেন,তারা কোচিং করালেও নম্বর বৈষম্যের বিষয়টি ভূল। তাছাড়া সরকারিভাবে তাদের কোচিং করানোর বিষয়ে সঠিক কোন নির্দেশনা এখন পর্যন্ত তাদের হাতে হাতে এসে পৌছেনি।
এব্যাপারে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌর পদ নন্দী এবছর শিক্ষার মাণ খনিকটা খারাপ হয়েছে বলে স্বীকার করে জানান,যেখানে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পৃক্ত থাকে সেখানে বৈষম্য থেকে শুরু করে ছোট-খাট ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। তাছাড়া শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। খুব শিঘ্রী সকল সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।