অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে খনন করা হচ্ছে ভবদহরে সেই আমডাঙ্গা খাল। ক্ষমতসীন আ’লীগের দুই নেতা সাবেক মেয়র ও অভয়নগর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এনামূল হক বাবুল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মোল্যা শুক্রবার সকালে স্থানীয়দের সাথে এক বৈঠাকে খালের জন্য নিজের মৎস্য ঘেরর ৬ বিঘা জমি দান করার ঘোষন দেন। পরে এনামূল হক বাবুল স্বেচ্ছাশ্রমে ওই খালকাটা কাজের উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে এলাকায় ভয়াবহ জলঅবদ্ধতা দেখা দিয়ে তৎকালিন চারদলীয় ঐক্য জোটের স্থানীয় সাংসদ সদস্য এম এম আমিন উদ্দিন এলাকবাসীর চাপের মুখে নিজ উদ্যোগে মহাকালের কাছে ভৈরব নদ থেকে আমডঙ্গা বিল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার একটি খাল খনন করেন । কিন্তু খালে পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাড়ায় রেল ও সড়কের ওপর দুইটি কালভার্ট থাকার জন্য । ২০০৬ সালে আবার জালাবদ্ধতা দেখা দিলে জনগন ওই কালভার্ট দুইটি ভেঙ্গে প্রশস্ত করার দাবিতে কঠোর আন্দোলন করেন। যার প্রেক্ষিতে রেল ও সড়ক দুইটি উপযুক্ত ব্রিজ নির্মিত হয়।
ফলে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে আমডাঙ্গা খাল দিয়ে কিছু পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু আমডাঙ্গা থেকে এককিলোমিটার দূরে রাজাপুর বিলে মধ্যে রয়েছে প্রবাহমান রাজাপুর খাল। ওই খালের সাথে সংযোগ না থকায় বিলের পানি নিস্কাশনে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। আমডাঙ্গা ও রাজাপুর বিলে রয়েছে আনেক প্রভাবশালীদের মাছের ঘের। ২০০৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমডাঙ্গা খালটি রাজাপুর খালের সাথে সংযোগ দেওয়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ করার নোটিশ দেয়। এ সময়ে জমির মালিকেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে খালটি তিন কিলোমিটা ঘুরে খনন করা হবে। তখন জনগন খালটি সোজা করে খননের জন্য আন্দোলন করেন। জনগনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই প্রকল্প। ২০১৬ সালে এলাকায় আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিলে আমডাঙ্গা খালটি সোজা করে খননের জন্য ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি আন্দোলন শুরু করেছে। যশোরের জেলা প্রশাসক এলাকাবাসির কাছে খালটি সোজা করে খননের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
যে কারনে এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে খননের উদ্যোগ নিয়েছে।
স্থানীয় সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইকবাল হোসেন জানান, আমরা সরকারের ওপর আর ভরষা করে থাকতে না পেরে নিজেদের উদ্যোগে খাল খননের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। এ জন্য সুন্দলী, চলিশিয়া ও মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়ন মিলে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি খাল কাটা কমিটি করেছি। ওই কমিটির নের্তৃত্বে খালের নকশা করা জমির মালিকদের কাছে যাই। তাদের কাছ থকে অনেক অনুনয় বিনয় করে জমি দানের জন্য রাজি করিয়েছি। তিনি আরো জানান, খালটি পুরোপুরি সোজা হবেনা । জমির মালিকেরা তার সীমানা ঘেষে জমি দান করতে চায়। যে কারণে একটিু আঁকাবাকা হবে। তিনি আশা করেন তাতে পানি যেতে সমস্যা হবেনা। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে। খালটির দুইটি স্থানে বাক হবে। ইতিমধ্যে ঘেরের মালিকেরা খাল কাটার জন্য মাছ তুলে পানি নিস্কাশন শুরু করেছেন। খালের দৈর্ঘ্য হবে ৩ হাজার ৬শত ৮৫ ফুট ও প্রস্ত হবে ২০ ফুট। এলাকার তিন শতাধিক লোক স্বোচ্ছাশ্রমে খাল কাটার কাজ শুরু করেছেন। খাল কাটা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল হক মোল্যা, সাবেক পৌর মেয়র ও আ,লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এনামূল হক বাবুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মোল্যা, সাবেক যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ মোল্যা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম, সুন্দলী ইউপি চেয়াম্যান বিকাশ রায় কপিল, খাল কাটাকমিটর নেতা বিকাশ রায়, শরীফ গাজী,ইকবাল হোসেন প্রমুখ।