অপ্রতুল খাবার : সুন্দরবনের করমজলে আড়াই শতাধিক বন্যপ্রাণীর জীবন সংকটে

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-১০ - ২০:৪৩

সবুজ হাওলাদার, মংলা : সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন এবং সংরক্ষণ কেন্দ্রের দেড় শতাধিক বন্যপ্রাণী ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভূগছে। প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় বন্যপ্রাণীগুলোকে যৎসামান্য খাদ্য সরবরাহ করে বণ্যপ্রাণী মারা যাওয়াসহ এর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার আশংকা দেখা দিয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে এ প্রজাতির কুমিরের আবাসস্থল হলেও অতিরিক্ত লবণাক্ততাসহ নানা কারণে এটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ধীরে ধীরে একেবারেই হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম লবণপানির এ প্রজাতিটি। এ ছাড়া সুন্দরবনে বানর ও হরিণের বংশবৃদ্ধিও স্থবির। ফলে প্রাকৃতিক বন্যপ্রাণীর জীববৈচিত্র্য হুমকির

মুখে। এ অবস্থায় লবণপানির কুমির, হরিণ ও বানরের প্রজনন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ এবং বংশবিস্তারের লক্ষ্যে ২০০২ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের উদ্যোগে বায়ো-ডাইভারসিটি প্রকল্পের আওতায় করমজলে দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।

এখানে কুমিরসহ বন্যপ্রাণীর প্রজনন ও উৎপাদন উপযোগী করে চারটি ব্রিডিং কেন্দ্র, একটি হরিণ ও বানর লালনশেড, চারণভূমি, ১৮টি কুমির সংরক্ষণ প্যান (হাউস), একটি কুমিরের চারণপুকুর তৈরি করা হয়। এ কেন্দ্রে তিন প্রকার প্রাণীর প্রজননে প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সরবরাহের জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়। এক যুগ ধরে এ কেন্দ্রে হরিণ, বানর ও কুমির প্রজনন এবং সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন এবং সংরক্ষণ কেন্দের ষ্টেশন কর্মকর্তা (এসও) হাওলাদার আজাদ কবির জানান, কেন্দ্রে অবস্থিত ৪০ টি হরিণ, ২০৭ টি কুমিরের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য বরাদ্দ না থাকায় তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। বিগত দুই মাস ধরে প্রাণীগুলোকে এভাবে দিনে একবেলা-আধবেলা খেয়ে-না খেয়ে কাটানোর এক পর্যায়ে সম্প্রতি সরকারী অর্থেও বরাদ্দ মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে এখানকার ২৪৭ বন্যপ্রাণীর জীবন চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় খাবার সরবরাহ কম হওয়ায় বন্যপ্রাণীগুলোকে যৎসামান্য খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে বণ্যপ্রাণীগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নিয়মিত কম খাবারের ফলে এগুলো দুর্বল হয়ে মারা যাওয়াসহ এর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার আশংকা দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ডেপুটী ফরেষ্ট রেঞ্জার আঃ ছত্তার জানান, এ কেন্দ্রের দেড় শতাধিক প্রাণীর খাবার ঘাস,গমের ভূষি, মুরগীসহ অন্যান্য বাবদ দৈনিক চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা হিসেবে মাসে এক লাখ বিশ হাজার থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার খাদ্য প্রয়োজন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও ) মাহমুদুল হাসান জানান, বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রাণীদের জন্য বন বিভাগ থেকে যে পরিমাণ চাহিদা দেয়া হয় তার তুলনায় মাত্র অর্ধেক বরাদ্দ পাওয়া যায়। গত বছর ১৫ লাখ টাকা চাহিদা দেয়া হলেও মাত্র পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা দিয়ে পুরো এক বছরের খাদ্যের সংস্থান সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর বন বিভাগের পক্ষ থেকে বন্যপ্রাণী কেন্দ্রের খাদ্য বাবদ ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৯ লাখ টাকা।

গত বছরের তুলনায় খাবারের মূল্য ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণীগুলোর খাবারের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখন যে পরিমান খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। নতুন করে আবারো অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হবে এবং তা পাওয়া গেলে প্রাণীগুলোর প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।