আবাসিক হোটেলগুলোতে কৌশল পাল্টে চলছে দেহ ব্যবসা

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-২১ - ১৪:১৬

৭টি আবাসিক হোটেলে অভিযানে আটক ৩৩ : দেহ ব্যবসার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা

কেএমপি গোয়েন্দা ডিসি’র

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র গোয়েন্দা বিভাগ দেহ ব্যবসার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার পর নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি অভিযানে নগরীর ৭টি আবাসিক হোটেল থেকে খদ্দের ও যৌনকর্মীসহ ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এমন অভিযান থাকায় আবাসিক হোটেলগুলো কৌশল পরিবর্তন করে অসামাজিক কার্যাকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৬ জুন ‘অভিনব পন্থায় আবাসিক হোটেলগুলোতে চলছে দেহ ব্যবসা’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ দৈনিক প্রবাহ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর কেএমপি গোয়েন্দা বিভাগ নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অভিযান পরিচালনা করেন।
কেএমপি গোয়েন্দার সূত্র মতে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বি এম নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে। গত কয়েকদিনে অভিযানে হোটেল টাইটান থেকে খদ্দের ও যৌনকর্মীসহ ১৪ জন আটক হয়। এছাড়া হোটেল জেএইচ ইন্টারন্যাশনালে ৩ জন, হোটেল মৌসুমীতে ৩ জন, হোটেল খুলনা গার্ডেন ইন ৩, হোটেল নুরাইয়ান ৩, হোটেল স্বপ্নপুরি ৩ ও হোটেল সঙ্গীতায় ৪ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে পুরুষ ও যৌনকর্মীরা রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল ম্যানেজারও রয়েছে।
গোয়েন্দার বিভাগের তালিকা অনুযায়ী নগরীতে ৫০-৬০টি আবাসিক হোটেল দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বি এম নুরুজ্জামান আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। অভিযানের পরেও আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ না হলে হোটেলের মালিকদেরকে আইনের আওতায় আনারও ঘোষণা দেন। দেহ ব্যবসার বিরুদ্ধে তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলসহ খুলনায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
জানা গেছে, কেএমপি গোয়েন্দা বিভাগ দেহ ব্যবসার বিরুদ্ধে নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করায় হোটেল মালিকরা কৌশল পরিবর্তন করেছেন। পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভুয়া কাবিননামা ও বিয়ের কাগজপত্র তৈরি করে এই দেহ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। খদ্দের আর যৌনকর্মীকে স্বামী-স্ত্রী বানিয়ে রাতে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এছাড়া যৌনকর্মীকে আয়া ও বাবুর্চি সাজিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে গেলে পুলিশকে হোটেল মালিকরা ভুয়া বিয়ের কাবিননামা দেখিয়ে দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে দেহ ব্যবসা পরিচালনার জন্য হোটেল ব্যবসায়ীদের এমন কৌশল বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। এ সব হোটেলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রীদেরকে নিয়ে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে এই পেশায় আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনিরাপদ এ সব যৌনচার সামাজিকভাবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাইট হাউজ এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত নগরীর তিন থানাধীন এলাকায় যৌনকর্মীর সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ১শ ২২ জন। যার মধ্যে হোটেলে যৌনকর্মীর সংখ্যা রয়েছে ৭৫ জন, আবাসিকে রয়েছে ৪৮৬ জন ও ভাসমান যৌনকর্মী রয়েছে ৫৬১ জন। এসব যৌনকর্মীকে লাইট হাউজের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে যৌনকর্মী ছিল ১ হাজার ৪২ জন এবং ২০১৭ সালে ছিল ৮৫০ জন যৌনকর্মী। এর আগে ২০১৬ সালে ছিল ৭১৯ জন।
সূত্র মতে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাইট হাউজ খুলনা সদর থানা, সোনাডাঙ্গা থানা, খালিশপুর আংশিক এলাকায় ও পূর্ব রূপসার আংশিক এলাকায় তাদের এই সংগঠন যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা, প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকেন। সূত্র মতে, বাইরে খুলনায় যৌনকর্মীর সংখ্যা রয়েছে ১২ হাজারের বেশি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূর্জয় নারী সংঘের সর্বশেষ ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী নগরীতে পেশাদার যৌনকর্মী ছিলো ৩ হাজার ৫০০ জন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সর্বশেষ ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে অপেশাদার যৌনকর্মী রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া রয়েছে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করে তারা চলে যায়। শহর সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলা এবং বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অভাবী মেয়েরা যৌনকাজে লিপ্ত হচ্ছে। তারা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় শহরে আসছে এবং কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে মহানগরীতে দুইটি হোটেল থেকে অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় ৪ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলাকে আটক করে পুলিশ। কেএমপি গোয়েন্দা পুলিশ এই অভিযান পরিচালনা করেন। গোয়েন্দা টিম এ অভিযানে ফেরিঘাটের মৌসুমী আবাসিক হোটেল এবং লোয়ার যশোর রোডের সোনার বাংলা আবাসিক হোটেল থেকে তাদেরকে আটক করে। এছাড়া ২৭ ফেব্রুয়ারিতে সদর থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজন পুরুষ ও পাঁচজন মহিলাকে আটক করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ তাদেরকে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে সদর থানাধীন ফেরিঘাটের মৌসুমী আবাসিক হোটেল এবং লোয়ার যশোর রোডের সোনার বাংলা আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন আবাসিক হোটেল থেকে ৪ নারী পুরুষকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।